বাক্‌ ১১৫ ।। প্রসঙ্গ আলপনা ।। অমিত বিশ্বাস



কলকাতা, কাজ যখন চলছে


কলকাতা, চূড়ান্ত রূপ


ঘটনাক্রম এক :
দাদা আমরা বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছি, আমরা এঁকেছি বিশ্বের সবথেকে বড় আলপনা ...
ঘটনাক্রম দুই :
এক পঞ্চাশোর্ধ শিল্পীকে এই আলপনা মহাযজ্ঞের সমালোচনার কারণে দলগতভাবে ব্যক্তিগতস্তরে গালিগালাজ।
ঘটনাক্রম তিন :
রূপালি পর্দার সেলেব-দের আগমন এবং ফটোশেসন এবং শিল্পপ্রেমীদের একাংশের কটূক্তি ।
ঘটনাক্রম চার :
বহু আলোচিত এবং আপলোডিত আলপনা বৃষ্টির জলে সম্পূর্ণ ধুয়ে যাওয়া।
ঘটনাক্রম পাঁচ :
বহু ঘটা করে রাজ্যের নানা প্রান্তরে আলপনা চিত্রিত এবং আপলোডিত।
ঘটনাক্রম ছয় :
যুবাভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অনুর্ধ ১৭ বিশ্বকাপ উপলক্ষে এক সুবিশাল আলপনা চিত্রিত।

কোজাগরী আলপনা
 
নৌকা আলপনা
আলপনা এক জনপ্রিয় লোকচিত্র। আদিবাসী ও হিন্দু নারীদের গৃহসৌন্দর্য রূপকল্প,  ব্রত অথবা মনস্কামনা এর আদি উৎস বলে ধরা হয়। বাংলায় লক্ষীব্রত, সেঁজুতিব্রত, বসুধারা ব্রত ইত্যাদি উপলক্ষে আলপনা দেবার প্রচলন আছে। এর কিছু অংশ অবন ঠাকুর লিপিবদ্ধ করেন। ব্রত উপলক্ষে ব্রতের স্থান উঠান, ঘরের মেঝে, খুঁটি, দেওয়াল, দরজার পাল্লা, কুলাতেও আলপনা দেওয়া হয়ে থাকে। বিয়েতে ছাতনাতলা, উঠান, বাসরঘর থেকে শুরু করে আসনপিঁড়ি, মঙ্গলঘট, কুলা ও ডালাতেও আলপনা দেওয়া হয়। আধুনিক যুগে দুই বাংলার মুসলিম সমাজের বিবাহ-অনুষঙ্গ হিসাবেও এর প্রচলন বিস্ময়কর। সঠিক অর্থে বললে আনন্দ অনুষ্ঠানের অন্যতম অংশ এই আলপনা।

আলপনা হল লেপন করা কারুকার্য। সাধারণত একটি অথবা দুটি রঙের সহজ বিমূর্ত (সরলীকৃত) রেখাচিত্র। বাড়ির চৌকাঠে, আঙ্গিনায়, বিয়ে ও অন্নপ্রাশনের বিভিন্ন অনুষঙ্গে, হিন্দু পূজা মণ্ডপে সাদা আলপনার খুব চল আছে। আদিবাসী রমণীগণ বিভিন্ন ভূমিজ রঙ ব্যবহার করে দেওয়াল এবং উঠোন চিত্রিত করেন। এটি মূলত ক্ষণস্থায়ী লোকশিল্প এবং এইটাই এর প্রধান লক্ষণ বলে আধুনিক পন্ডিতরা মনে করেন।
 
আম্রকুঞ্জের আলপনা, শান্তিনিকেতন


বাংলার আলপনায় চিরাচরিতভাবে ভিজে চালগুঁড়ো সাদারং হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া তেল-সিঁন্দুর লাল, এবং হলুদবাটা হলদে রঙ হিসাবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত চালের গুঁড়োর পিটালীর মধ্যে ছোট এক টুকরো কাপড় কিংবা পাটের টুকরো ভিজিয়ে নিয়ে অনামিকা দিয়ে আলপনা আঁকা হয়। আলপনার ছবিগুলি পুরু রেখায় তৈরি এবং দ্বিমাত্রিক। স্মরণাতীত কাল থেকে বাংলার নারীরা ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে  বিষয়বস্তু হিসাবে পদ্ম, ধানের গুচ্ছ, বৃত্তায়িত রেখা, সূর্য, মই, লক্ষীর পদচিহ্ন, মাছ, পান,পাখি, বিশেষ গাছ, শৃঙ্খল প্রতীকি অর্থে ব্যবহার করে আসছেন।

একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে পৌঁছিয়ে আঞ্চলিকভাবে দুইবাংলায় আলপনা দেওয়ার রেওয়াজেরও বিবর্তন ঘটেছে, ঘটেছে প্রকরণের বিবর্তনও অর্থাৎ হাতের অনামিকার বদলে চওড়া তুলি ও সিন্থেটিক রঙ। বিবর্তন আধুনিকতার লক্ষণও বটে। দুটি প্রধান স্রোতের কথা এখানে বলব, প্রথমটি শান্তিনিকেতনের আলপনা চর্চা। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে লৌকিক স্রোতকে অসম্ভব গুরুত্ব দিতেন সেকথা না বললেও চলে। আলপনা একটি লৌকিক উপাদান, যার মধ্যে লুকিয়ে থাকে সাধারণ মানুষের চাওয়া পাওয়া কামনার গল্প। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় প্রত্যন্ত এলাকাবাসী আশ্রমিকরা দোল, বর্ষামঙ্গল, বৃক্ষরোপণ বা অতিথিবরণ প্রভৃতি অনুষ্ঠানের অঙ্গসজ্জার প্রয়োজনে আলপনা চিত্রিত করতেন। শান্তিনিকেতনে সর্বপ্রথম সুকুমারী দেবী ঘরোয়া আলপনাকে নিয়ে আসেন। নন্দলাল বসুর উৎসাহে এটি পরিমার্জিত হয়। এই আলপনার প্রতীকের রসদ শিল্পীরা সংগ্রহ করতেন প্রাকৃতিক অথবা দৈনন্দিন উপাদানগুলি থেকে। স্বাভাবিকভাবেই ধর্মীয় অনুসঙ্গগুলি ধীরে ধীরে উধাও হয়ে গেল এই সব বড় মাপের আলপনাগুলি থেকে। আসরে এলো স্থানীয় গাছ ও পশুপাখি, সাঁওতাল দেওয়ালচিত্রের নকশা, ঋতু-সম্পর্কিত উপাদান ইত্যাদি। পরবর্তীকালে আশ্রমিকরা আলপনাকে আর ভূমিতে সীমাবদ্ধ রাখলেন না, নাটক ইত্যাদির মঞ্চ-নির্মাণে সেটি খাঁড়াই দেওয়ালেও সজ্জিত হতে লাগল। প্রসঙ্গত জানাই এই সকল আলপনার রঙ নির্বাচন সাধারণত সাদা, মেটে, গেরুয়া, হলুদ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। নন্দলাল বসু হয়ে এই যাত্রাপথ কন্যা যমুনা ও গৌরী ভঞ্জ হয়ে শিল্পী ননীগোপাল ঘোষ পর্যন্ত সচল ছিল, মাঝে সাময়িক বিরতির পর সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায় এবং তার সহযাত্রী শিল্পীরা এই ধারাটি বর্তমানে জনপ্রিয় করেন।
 
ছাতিমতলার আলপনা, শান্তিনিকেতন


শ্রীনিকেতন মাঘ মেলার আলপনা, শান্তিনিকেতন
আলোচ্য দ্বিতীয় ধারাটির মূল উৎস বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পীসমাজ।  দেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে আলপনা দেবার প্রথা তো ছিলই। এরসাথে আদিবাসী বিশেষত সাঁওতালদের গৃহসজ্জা শিল্পীদের অজানা ছিল না। আরো একটি জিনিস আছে বাংলাদেশে, সেটি হল লৌকিক উপাদানগুলিকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা এবং এর যুগোপযোগী ব্যবহার। ফলে রিক্সার অলংকার থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত দ্রব্যাদিতে লোক মোটিফের সফল ব্যবহার। এমনকি  ল্যাম্পপোষ্ট, বড় নর্দমা ঢাকা টাইলসেও মোটিফ চিত্রিত দেখা যায়। শান্তিনিকেতনের আলপনার যে চর্চা ছিল তা সীমাবদ্ধ ছিল গুণীসমাজের কাছে, বাংলাদেশের শিল্পীরা সেই আলপনাকে নিয়ে এলেন জনসাধারণের চলার রাস্তায়। নববর্ষের মঙ্গলযাত্রা অথবা অমর  একুশে ফ্রেব্রুয়ারীর পদযাত্রা উপলক্ষে রাস্তায় চিত্রিত হল এক বিমূর্ত, আলংকারিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ রূপকল্পের প্রতীকি নির্মাণ। আলপনার বিষয়বস্তু হিসাবে এল ফুল, লতা, পাতা, পাখি, ত্রিভূজ, চতুর্ভূজ, বৃত্ত ইত্যাদির সাথে রেখা ও রঙের সাবলীল ছন্দময় বিন্যাসের নকশা বা কোনো নির্দিষ্ট ফর্মের বাইরে গতিযুক্ত নতুন রেখা ও রঙের আঁকি বুকি। লক্ষণীয়, বাংলাদেশের আলপনার লৌকিক মোটিফ প্রচুর পরিমাণে থাকলেও এই আলপনা হল সম্পূর্ণ রঙিন। উজ্জ্বল সাদা, লাল, সবুজ, হলুদ, গোলাপী, নীল, বেগুনী কি রঙ নেই সেখানে।

অমর একুশে আলপনা-১, বাংলাদেশ
 
অমর একুশে আলপনা ২, বাংলাদেশ 
 এই দুটি ধারার এই সংমিশ্রণ দেখা গেল এইবছর কলিকাতার  দুর্গাপুজোর একটি মন্ডপ প্রাঙ্গণের সংলগ্ন রাস্তায়। তথ্যের কারণে জানাই এর আগে এইবছরের নববর্ষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বাংলাদেশের অগ্রজ শিল্পীদের সহযোগীতায় সংলগ্ন রাস্তায় আলপনা চিত্রিত করেছিল।  এই পুজো মন্ডপপর্বে অংশ নিয়েছিল  রাজ্যের শিল্প মহাবিদ্যালয়গুলির  ৩২৫+ ছাত্রছাত্রীরা। বড় মাপের এইধরণের কাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো পরস্পরের হাত ধরাধরি করে কাজ করা, আমিত্ব এখানে জরুরী বিষয় নয়।  তিন সিফটে  চব্বিশ ঘন্টা অমানুষিক পরিশ্রম করে এই মহাযজ্ঞ সফল করেছিল তারা। কলিকাতার শিল্প ইতিহাসে এটি একটি উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা কিনা সেটা ভবিষ্যত বলবে কিন্ত এই প্রসঙ্গে এবং এর পরবর্তী আলপনা কর্মকান্ড প্রসঙ্গে নবীন-প্রবীন শিল্পী ও শিল্পরসিক এবং সাধারণ মানুষের উৎসাহ অবশ্যই আমাদের শিল্পকলাকে সমৃদ্ধ করবে। 

শিল্পী গণেশ পাইনের একটি আলপনা


সুবিশাল আলপনা নির্মাণ এক পরিশ্রমসাধ্য বিষয় সেটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। এই পরিকল্পনাটি একজন অথবা দুইজন অভিজ্ঞ শিল্পীর নেতৃত্বে আর্ট কলেজের পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীদের দল সম্পূর্ণ করেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে নিজেদের এই সফলতা তারা বিপুলভাবে প্রচার করেছে, সত্যিই এরা এর দাবিদার। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে আগ্রহ সঞ্চয় হয়েছে। এই ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে রাজ্যের অন্যপ্রান্তরেও চিত্রিত হয়েছে বড়মাপের আলপনা।  বয়সজনিত নবীনতার কারণে এই সকল তরুণ শিল্পীদের একাংশ থেকে এমন উক্তি ভেসে এসেছে যা অন্যদের আহত করেছে। ফলে 'বিশ্বের সব থেকে বড় আলপনা' জরুরী না 'নান্দনিকভাবে সফল আলপনা' জরুরী সেইটাই নজর এড়িয়ে গেছে। পাশের পাড়ার শিল্পীরাও আমাদের শিল্পীবন্ধু, একই আন্দোলনে অগ্রজ সেটা ভুলে গেছি। ফলস্বরূপ এসেছে আমরা-ওরা দ্বন্দ্ব। আবার মাধ্যমগত অনভিজ্ঞতার কারণে জল-নিরোধক বিষয়ভাবনা ওভারলুকড্‌ হয়ে গেছে। মাঝখান  থেকে সেলেবরা এসে তুলি ধরে ছবি তুলে মিডিয়া কভারেজের পুরোটাই খেয়ে গেছে। এমতাবস্থায় পঞ্চাশোর্দ্ধ শিল্পীর উক্তির সারমর্ম বুঝতে না পেরে তাঁর উপরে অশ্লীল আক্রমণে একদল তরুণ ভেসে গেছে। আর একদল প্রবীণ শিল্পী সব বুঝেও কোনো বিশেষ কারণে চুপ করে গেছেন। এবং পরের দিন বৃষ্টিতে পুরো আলপনা ধুয়ে যাওয়ার পর সব আলোচনা যেন আচমকাই থমকে গেল।

বর্ষবরণ আলপনা-১ বাংলাদেশ

এই বাংলার শিল্পকলা জগতে একটি কথা প্রচলিত আছে, সেটি হল 'শিল্পীরা কেউ বেজন্মা নন'। অর্থাৎ প্রত্যেক শিল্পীর বাবা-মা (ব্যাপকার্থে গুরুদেব) আছেন। আমরা আজ যেটি নিয়ে কাজ করছি সেটি অতীতের কোনো না কোনো শিল্পী অথবা শিল্পগোষ্ঠীর দান। আমি বা আমরাই 'একক' এই উক্তি আমাদের শোভা দেয় না।  এই দলটির একাংশই এরপর চিত্রিত করলেন ফিফা আয়োজিত অনুর্দ্ধ ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের স্টেডিয়াম সংলগ্ন রাস্তায়। কাজ করেছে ২০০ জন শিল্পী। ফলে সারা বিশ্ব এই সৃষ্টিকর্মকে অনুভব করলেন সরাসরি অথবা টিভির পর্দায়। বাংলা গর্বিত।

বর্ষবরণ আলপনা -২ বাংলাদেশ

এবার আসি কৌশলগত আলোচনা এবং নান্দনিক সফলতার প্রসঙ্গে। এটা সমালোচনা নয়, বদনাম প্রচেষ্টাও নয়, নীতি পুলিশ তো একেবারেই নয়। এই আলোচনা লেখকের একটু দূর থেকে দেখার ফলাফল হিসাবে ধরে নিতে পারেন। সেসকল তরুণ শিল্পীরা এই কাজটি করেছেন তাদের অনেকেই আমার ভাই-বোনতুল্য, অন্তত ইনবক্সে ছবি নিয়ে আলোচনা হয়। আবার বাংলাদেশ এবং শান্তিনিকেতনে উৎসব উপলক্ষে যারা আলপনা দেয় তারাও আমার বন্ধু বটে। ফলে অনেকেই সাথেই এই বিষয় নিয়ে আলাপ করেছি।  প্রসঙ্গত জানাই বাংলাদেশে এবং শান্তিনিকেতনে আলপনা চিত্রিতের ক্ষেত্রে শিল্পীরা মনের তাগিদেই করেন অন্যদিকে দূর্গাপুজো এবং ফিফা কাপ উপলক্ষে অংকিত আলপনা শিল্পী এঁকেছেন পারিশ্রমিক নিয়েই। এক্ষেত্রে শিল্পীদের ভাবনা কতটা স্বাধীন পথে চলেছে আর কতটা কর্পোরেট হাউস ঠিক করে দিয়েছে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ হিসাবে বলতেই পারি দ্বিতীয় আলপনা থেকে বাংলার লৌকিক মোটিফ লুপ্ত হয়েছে অথবা লুপ্তের পথে। দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি আসছে, সেটি হল আগামী বছর যদি কোনো হাউস এগিয়ে না আসেন তবে এই সুবিশাল আলপনার চর্চা যেটি শুরু হয়েছে সেটি কি থেমে যাবে? লক্ষাধিক টাকার রঙ-তুলি এই সকল শিল্পীরা কিভাবে জোগাড় করবেন যদি তারা এটিকে আরো পরিমার্জিত  আরো নান্দনিক কোরে তোলবার ইচ্ছা রাখেন? এখানে টিকে থাকার অপর প্রধান প্রশ্ন হলো পরম্পরা, যেটি বাংলাদেশের শিল্পীদের আছে আবার শান্তিনিকেতনের শিল্পীদের আছে কিন্তু কলিকাতার শিল্পীদের এই পরম্পরা প্রতিষ্ঠিত করতে বছর দশেকের অধিক সময় তো লেগে যাবারই কথা যদি তারা মনে করেন বাকি দুই শৈলী থেকে পৃথক একটি নান্দনিক শৈলী রচনা করবেন। 

সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায় -১, শান্তিনিকেতনি আধুনিক আলপনা

সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায় -২, শান্তিনিকেতনি আধুনিক আলপনা

আলোচ্য শিল্পীদলের সব থেকে প্রশংসা করবার বিষয় হলো এদের spirit এদের আত্মবিশ্বাস। তরুণ হবার সুবাদে প্রতেকেই প্রাণশক্তিতে ভরপুর, একজোট হয়ে কাজ করলে অনেক অনেক অসাধ্য সাধন করবার ক্ষমতা ধরে। অহংকার শব্দটি শিল্পীর জন্য নয় ... মূর্খের শব্দ... শিল্পে আমি বলে কিছু হয় না, হয় আমরা। শিল্প আসলে একটা নদীর ধারার মতো, আমরা এক এক জন খুব ছোট এক একটি ইউনিট মাত্র। প্রবহমান ধারার অংশ হতে পেরে গর্বিত হওয়া আর আমি বা আমরাই এই নদীটার মা-বাপ এই ধারণা করা ... এই দুইয়ের মধ্যে তফাত আছে। এই মুহূর্তে এদের যা প্রয়োজনীয় বলে লেখকের মনে হয় তা হলো আলোচ্য শান্তিনিকেতনী ও বাংলাদেশের আলপনার ধারা অনুধাবন করা, বিশেষ করে তার চরিত্র, রচনা কৌশল, তুলি চালনার পদ্ধতি। দরকার পড়লে যৌথ কর্মশালার কথাও ভাবা যেতে পারে। আমরা ধরে নিচ্ছি এই দল আগামী বছরগুলি  আবার আলপনা চিত্রিত করবে তা স্পনসর থাকুক অথবা না থাকুক। এই সময়কালের মধ্যে বাংলার লৌকিক মোটিফগুলি , বাংলার আলপনার চরিত্র যা 'রঙ্গোলী'র চরিত্র থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ইত্যাদি আরো বেশি করে অনুধাবন করা।এবং কলেজ অথবা সামাজিক অনুষ্ঠানে সেগুলিকে প্রচলন করা। এতে জনগণ আরো বেশি করে আগ্রহী হয়ে উঠবে শিল্পসমাজের প্রতি। এই সুবিশাল কর্মকান্ড 'হুজুক' এমন কথা যেন এই রাজ্যবাসী কল্পনাতেও আনতে না পারে সেই দিকে স্বচেষ্ট হতে হবে সবাইকে। প্রয়োজনে আমরাও হাত লাগাব তোমাদের সাথে। শিল্পী ও শিল্পপ্রেমীদের তরফ থেকে আশা রাখব  ধীরে ধীরে এই আলপনা বিশ্বনন্দিত এক বিশেষ চরিত্রের জন্ম দেবে ... গর্বিত হবে সমস্ত শিল্পীকূল। 

যুবা ফিফা বিশ্বকাপ কলকাতা

যুবা ফিফা বিশ্বকাপ  কলকাতা

যুবা ফিফা বিশ্বকাপ কলকাতা

যুবা ফিফা বিশ্বকাপ কলকাতা

(প্রবন্ধ নির্মাণে সাহায্য করেছেন সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়, মুকুল কুমার বাড়ৈ, চিন্ময় মুখোপাধ্যায়, গৌরব রায়, শুভেন্দু ভাণ্ডারী এবং রাজেশ বর্মন। সবাইকে ধন্যবাদ।)

অমিত বিশ্বাস
কৃষ্ণনগর
৩০/১০/২০১৭

10 comments:

  1. বড়ো ভেবে বড়ো হতে গিয়েই নান্দনিকতাকে মেরে ফেলছে। যা শিল্প হলেও হতে পারে, শিল্পমন কখনোই নয়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. শিল্পমন ছাড়া শিল্পী অস্তিত্বহীন। ধন্যবাদ আপনাকে।

      Delete
  2. এই প্রবন্ধটি সুচিন্তিত,ইতিমূলক দৃষ্টিটি কেবল আকর্ষণীয় নয়,অতি আবশ‍্যক বলে মনে করি আমি।
    বর্মাতমান সমাজে একত্র হোয়ে মিলেমিশে কাজ করার সুযোগে তা অর্থকরি হোলেও
    আহ্বান করি।
    তবে দেশের অর্থাৎ বাংলার ঐতিহ‍্যবাহী যে আলপনা আর যদি সম্ভব হয় তো শান্তিনিকেতনের ধারার স্বল্পতম কিছু নিয়ে একটি পরিচালক গোষ্ঠি এই পথ-আলপনাকে এগিয়ে নিতে পারেন পরিমিত দৃষ্টিনন্দন রঙের ব‍্যবহারে,তাহলেই সার্থক হবে এ নবশিল্প-কলা।।
    তবে এও জানি পরিমিত রঙের সমাধানে মতানৈক‍্য হোতেই পারে।
    আমাদের সবার যদি লক্ষ‍্য থাকে একে রক্ষা করাই প্রধান, তাহলে নিশ্চয়ই একটি লক্ষ‍্যে সামঞ্জস‍্যের মধ‍্য দিয়ে পৌছনো যাবেই মনে করি।
    অন‍্যথা হবেনা বা অপ্রাসঙ্গিক হবেনা নিচের উদাহরণটি।
    জগতের অন‍্যতম সমস্যা দীর্ঘদিনের পূর্ব-পশ্চিম বার্লিনের মিলন নানা মতানৈক‍্যের মধ‍্যেও অনড় মিলন-লক্ষ‍্যে পৌছনো সম্ভব নানা আলোচনায় সামঞ্জস‍্যেই, এ আলপনাশিল্প রক্ষা করা তো কিছুই নয় সেই তুলনায়।
    আশা রাখি এ উৎসাহ যেন থেমে না গিয়ে এগিয়ে যায়।
    সৃষ্টির সঙ্গে সামঞ্জস‍্যবিধানে পরিবর্তন আসবেই, তবে সৃষ্টির সঙ্গে তাল মিলিয়েই, তালভঙ্গে পরম্পরা বিঘ্নিত হয় বৈকি!

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ দিদিভাই, আপনার সাজেশন নিশ্চয় আমরা অনুভবে নেব।

      Delete
  3. Khub bhalo laglo lekhata pore. Khub niropekhyo bhabe sotti ta ke tule niye, Alpona bisheshognyoder songe aalochona kore, khub positive bhabna niye likhechen apni. Bideshe boshe social media te chobi dekhechi o kichu kichu somalochonao porechi tai apnar lekhata pore puro byapartar akta sundor dharona pelam.

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

      Delete
  4. খুব ভালো লাগল।অনেক কিছু জানতে পারলাম ।আমি স্কুলের ছাত্র ছাত্রী দের ফেলে দেওয়া বিয়ের কার্ড কেটে কেটে আলপনা শেখাই । ওদের আলপনা ব্যপারে ধারনা দিতে আপনার লেখাটা খুব ই কাজে লাগবে। এখান থেকে ওদের লেখাব ।

    ReplyDelete
  5. খুব ভালো লাগল।অনেক কিছু জানতে পারলাম। আমি স্কুলের ছাত্র ছাত্রী দের ফেলে দেওয়া বিয়ের কার্ড কেটে কেটে আলপনা শেখাই । ওদের আলপনা ব্যপারে ধারনা দিতে আপনার লেখাটা খুব ই কাজে লাগবে। এখান থেকে ওদের লেখাব ।

    ReplyDelete
  6. খুব ভালো লাগল।অনেক কিছু জানতে পারলাম। আমি স্কুলের ছাত্র ছাত্রী দের ফেলে দেওয়া বিয়ের কার্ড কেটে কেটে আলপনা শেখাই । ওদের আলপনা ব্যপারে ধারনা দিতে আপনার লেখাটা খুব ই কাজে লাগবে। এখান থেকে ওদের লেখাব ।

    ReplyDelete