বাক্‌ ১১৫ ।। জার্নাল ।। জ্যোতির্ময় বিশ্বাস




কথাপ্রকাশ

বাইরে থেকে

ছোটবেলায় বাবার (অবশ্য কোনোদিন বাবা বলিনি বাবু) খোঁজে যখন এমন কেউ আসতেন যার সঙ্গে বাবা মুহূর্তে ঘরে থেকেও দেখা করতে চাইতো না, তাকে গিয়ে বলতে হতোবাবা তো বাড়িতে নেই, বিকেলে আসুন অথচ তিনি হয়তো বাবার একটা কাশির আওয়াজ শুনে ফেলেছেন কিংবা নিশ্চিত খবর পেয়েই এসেছেন যে রামবাবু এখন বাড়িতেআসলে বইলো অমুক আসছিলোলে উনি 'লে যেতেন ব্যাপারটা আমাকে বিব্রত করতো এই যে লেখা কাজটা, অনেকসময় এরকমভাবে বিব্রত করে আমাকে লেখাও অমুকজনদের মতো আমার কাছে আসে
লেখক জ্যোতির চিন্তাভাবনার আওয়াজগুলোও সে পায়, কিন্তু কখনো কখনো ব্যক্তি জ্যোতি তাকে মুহূর্তে নিতে চায়না সে অন্য কাজ করতে চায় বলেপরে লেখা 'লে যায় লেখক জ্যোতি একটু থতবত হয় আর বাবার সঙ্গে সেই লোকটার যেমন  নিশ্চয়ই পরে দেখা 'তো, লেখাটার সাথেও আমার দেখা হয় হয়, টের পাই!

এই অব্দি এই উদাহরণ শেষ

এই ব্যাপারটার সঙ্গেই আমাদের (এই আমাদের মানে আমি+আমি আমি+তুমি/বাকিরা নয়) বসবাস -তৈরি লেখাগুলোর সঙ্গে কনফ্রনটেশনে না যাওয়া বা কখনো যাওয়া, এবং একটা দুটো কিছু লিখে ফেলা এইসব আর দিনের এইসব নিয়েই এই জার্নাল কয়েকটা ঘটনা কিছু তারিখের লেজে পা দেয়া




আগস্ট ১৬, ২০১৭

একটা বিষয় খুব অদ্ভুত লাগছে কিছুদিন ধরে এটা ঘটছে আমি ইউটিউবে সাধারণত বাংলাদেশের নাটকগুলো দেখি, দিনের একটা সময় ওতে যায় ইদানিং কী হয়েছে- ইরাক, ইরান, ISIS, মসুল, সিরিয়া, তাল-আফার, বাগদাদি অমুক তমুক ইত্যাদি সার্চ রে রে দেখছি সাংবাদিকরা যুদ্ধ কভার করছে দেখছি, ISIS এর লোকজন সভা করছে দেখছি স্বয়ং নিজের একটা আগ্রহ, আমি বুঝতে পারছিনা এখন রাত দুটোর মতো কিছুক্ষণ আগে একটা ভিডিওয় ইজ্জ্বত ইব্রাহিম আল-দৌরি
নামটা পেলাম গুগলে সার্চ করলাম জানা গেল উনি ছিলেন সাদ্দাম হোসেনের নিকটতম সামরিক অফিসার ২০০৩ সালের মার্কিন আক্রমণের সময় উনি ছিলেন নকশবন্দি আর্মির নেতা সাদ্দামের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে সম্ভবত একমাত্র উনিই মার্কিন সেনার হাত থেকে পালাতে এবং পরবর্তীতে অক্ষম প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন কুখ্যাতমোস্ট-ওয়ান্টেড ইরাকি প্লেয়িং কার্ডস’-কিং অব ক্লাবছিলেন উনি ১৭ এপ্রিল ২০১৫, ইরাকি শিয়া সেনা দাবি করলো ইজ্জ্বত ইব্রাহিমকে তারা পূর্ব তিকরিতের একটি তেলক্ষেত্রের কাছে দশজন দেহরক্ষী সহ হত্যা করেছে দেহাংশ বাগদাদে পাঠানো হলো নিশ্চিত করতে কিন্তু ইরাক সরকারের হাতে ইব্রাহিম আল-দৌরির কোনো ডিএনএ রেকর্ড নেই কনফার্ম করা গেলোনা নিষিদ্ধ বাথ পার্টি সঙ্গে সঙ্গে তাদের নেতার মৃত্যু অস্বীকার করলো

জানলাম কিন্তু তাতে কি 'লো বুঝলাম না অথচ দেখতে, ভাবতে, আর এখন বলতে ভালোলাগছে জিনিসগুলো আমার কাছে সিনেম্যাটিক, গল্পময় গল্পের চাইতে গল্পময়তা আমার বেশি ভালো লাগে শিয়া ধর্মগুরু আয়াতোল্লা মহম্মদ সাদেক আল-সাদঁরকে সাদ্দামের সেনা কর্তৃক হত্যার ফুটেজটা গতকাল দেখেছি আসলে ইউজারের সার্চিং টেন্ডেন্সি ইউটিউব খেয়াল করে, এবং সেই অনুযায়ী পরপর ভিডিও আসতে থাকে দেখলাম সাদা একটা গাড়ি ধীরে এগিয়ে আসছে, তাকে ঘিরে রাস্তার দুইধারে মানুষের জমায়েত অতি অল্প দূরে আরেকটা গাড়ি, সেটাও সাদা কোনোটারই ভেতরের আরোহীদের দেখা যাচ্ছেনা এবার, মুহূর্ত পরে পেছনের গাড়িটা সামনে চলে এলো দরজা খুলে গেলো, নেমে এলো তিনজন রাইফেলধারী এলোপাথাড়ি গুলি চালালো প্রথম গাড়িটি লক্ষ্য রে, যেটায়, বোঝা গেল আয়াতোল্লা তাঁর দুই ছেলের সঙ্গে রয়েছেন কয়েক রাউন্ড গুলি রে তারা 'লে গেলো ঠিক তার পরেই ভিডিওটায় দেখাচ্ছে, ঘটনাস্থলে একটা অ্যাম্বুলেন্স স্ট্রেচারে শোয়ানো আয়াতোল্লা, কিঞ্চিৎ প্রাণ তখনও রয়েছে, ছেলে দুজন মারা গেছেন এমন সময় তাঁর মৃত্যুকে কনফার্ম করতে সাদ্দামের পুলিশ এলো স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের পায়ে পরলেন প্রাণভিক্ষায় কাজ হলোনা এক অফিসারের হাতে আয়াতোল্লার ইন্তেকাল হলো


এই অভ্যাসের ব্যাখ্যা পাচ্ছিনা



আগস্ট ১৭

একটা তারিখ তার পূর্ববর্তী তারিখগুলোর দায় উপহার নিয়ে থাকে এই এখন যে বাক্যগুলো লিখছি, এগুলোকে কিন্তু ১৭ তারিখের লেখা বলা চলেনা বরং, ১৭ তারিখে লেখা গত ১৫ তারিখ সন্ধ্যা যা ঐদিন লিখতে পারিনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা দিবসের মহাসন্ধ্যায় অভিজিতের মেসে সে ‘Se7en’ দেখছি, আনসেভড নাম্বার (চেনা) থেকে এসএমএস : “Happy independence day 2015, Mr. Biswas.”
লিখলাম, “But (un)fortunately it's  2017.”
তিনি বললেন, “ No, I'm stuck there. You moved on, precisely.”

এবং আরো কিছু এসএমএস প্রায় সবগুলোই ওদিক থেকে আসছিলো তিনি যে আমাকে এখনো খুব ভালোবাসেন এবং ভবিষ্যতেও নাকি বাসবেন একথা জানালেনআর জানতে চাইলেন কেন আমি তাকে এতো ঘৃণা করি, তিনি কি আমাকে সেরকম গভীর কিছু আঘাত আদৌ দিয়েছেন?
আবহাওয়া বাংলা সিরিয়ালের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেখে আমার ‘Se7en’ দেখা অসম্পূর্ণ রইলো সমারসেটকে মিলসের স্ত্রী বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, এই অব্দি দেখে ডেটা কেবল দিয়ে ছবিটা ফোনে নিয়ে চলে এলাম দেখি বাইরে আস্তে হাওয়া বইছে, হাওয়ায় বইছে যে আরো কতো কি



১৮ আগস্ট

৷৷ভোর ভোর৷৷

রাগ, ঘৃণা, মনখারাপ, খিদে, কাজগুলোর তাড়া এবং একটা লেখার সম্ভাবনা নিয়ে কালকের রাত গত হলো আমার শালবাড়ির এক বন্ধু অমৃত বলেছিলো, জীবনে প্রথম প্রেম ভুল মানুষের সঙ্গে ভুল সময়ে হয় ওর কথাটা খুব ক্যাজুয়ালি বলা মনে হয়েছিলো, কিন্তু আজকাল কিছু কিছু সময়ে অমৃতের ওই কথাটা খুব মনে পরে যায় অভিজিতের মেস থেকে ফেরার সময় পেঁয়াজ, ডিম আর কাঁচালঙ্কা কিনতে বয়েলখানা বাজারে যেতে হয় একটা গলির দুই ধারে উঁচু সমস্ত দালানের মধ্যে হঠাৎ একটা ছোট দরমার বেড়া দেয়া বাড়ি যেন ভাঁপা পিঠার মধ্যে করলার ভর্ত্তা (এই চমৎকার উপমাটা পেয়েছি সালাহউদ্দিন লাভলুর একটা নাটকে) এই গলিটা দিয়ে না গেলেও আমার চলে, কিন্তু এই বাড়িটার সামনে দিয়ে যাওয়ার টানেই আমি এই গলিটা ব্যবহার করি আরো সূক্ষ্ণ 'রে বললে গেটের সামনে যে ফুরুশ ফুলের গাছটা আছে, ওর টানে কী সুন্দর দেখতে! একটা ভাবনা জন্মেছিলো যে, এই গাছটার সতেজ সমস্ত ডাল, তরুণ তরুণ পাতা আর ফুলগুলো আমার কোনো লেখার একটা আবহ তৈরি রে দেবে এই ফুলগাছটা, আমি এখান দিয়ে গেলেই সেই অপ্রস্তুত আগামী লেখাটার পক্ষ থেকে জানান দেয় ২০১৫ ১৫ আগস্ট প্রেমিক হিসেবে পিপলির সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাত, জলপাইগুড়ি কফি হাউজে (প্রভাত মোড়) একটা বাক্য তৈরি হয়েছিলো সেদিন রাতে, ‘প্রেমিকার ঠোঁট থেকে গোলাপি অক্ষর ঝরে পরে অনেক লেখায় স্থান পেতে চেয়েছিলো হয়নি লেখকদের এরকম কিছু বাক্য কিছু সিনট্যাক্স মাথা বা মনের ভাড়ার ঘরে প্রস্তুত থাকে কাল অভির মেস থেকে বেরিয়ে গলি দিয়ে বাজার করতে যাবার সময় সেটা মনে রে গেলো তখন যা হলো, দেখলাম বাক্যটির মধ্যেপ্রেমিকার ঠোঁটএই দুবছর পর জেনারেটরের আওয়াজে নেচে ওঠার মতো আনন্দ নিয়ে বিরাজ করছে, গানটান বন্ধ... আমার প্রাক্তন প্রেমিকা তার ঠোঁট এখন যে ভাব নিয়ে আমার মধ্যে অবশিষ্ট আছে তাকে প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতাই তার নেই অথচ প্রেমিকা শুনলে/ভাবলে আজও তার কথাই মনে আসছে, আবার সাথে সে একটানা’- নিয়ে আসছে একটা নেগেটিভ ভাইভযে ভালোবাসেনালে একটা উচ্চারণ তৈরি হলো কিন্তু এইযে’-টাও আমার প্রাক্তন নয় আরভালোবাসেনা’- অর্থও মোটেই এটা নয় যে সে আমার সঙ্গে আর প্রেম করেনা যখন কারো সময় অন্যকারো সময়ের সঙ্গে একটা সুইটনেসসমেত একত্রে বসবাস করতে চেষ্টা করে সেখানে ভালোবাসা তৈরি হয় আর বেঁচে থাকাটা তো সময়চর্চাই আমিযে ভালোবাসেনালে তাদের কথা ভাবলাম যারা নিজেদের সময়টার পরাণ বুঝতে ব্যর্থ আমি যেমন

রাতে রান্না করলাম ডিমের ঝোল চেষ্টা করলাম মাখোমাখো করতে, কিন্তু গুঁড়ো মসলায় জুত হলোনা খেতে বেশ হয়েছিল ঘর গোছানো, পড়ার টেবিল গোছানো, রান্না করা আর নতুন বই, কলম কেনা এগুলো আমার নিজস্ব মেজাজ মেইন্টেনান্স থেরাপি




৷৷রাত ১১টা৷৷


বাক্-১১৩ প্রকাশিত হয়েছে সন্ধ্যায় সৈকতের সঙ্গে রাজবাড়ি মনসা মেলায় গিয়েছিলাম প্রচন্ড ভিড় দেখে দুই বন্ধু কিছুটা রে সদ্য কড়াই থেকে নামানো মুচমুচে গরম ঝুড়িভাজা কিনে দীঘির পারে গিয়ে বসলাম দিকটা অপেক্ষাকৃত নির্জন নীলাঞ্জনার কথা বলছিলো আমার ফোনে ইন্টারনেট সবসময় অন থাকে, একটা ফেসবুক নোটিফিকেশন পেলাম অনুপমদার ট্যাগ বাক্-১১৩ খুললাম সৈকত আমার গদ্যটা পড়ার চেষ্টা করলো ইংলিশ মিডিয়াম বাংলা উচ্চারণে পরে আমিই পড়ে শোনালাম এই গদ্যটা ১৬ তারিখ শেষবার এডিট রে পাঠিয়েছিলাম নাজেহাল হয়ে গিয়েছিলাম এডিট করতে বসে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে ব্যবহার করেই উঠতে পারলাম না অথচ প্রয়োজন ছিলো ব্যাপারটা সৈকতকে বললাম : খেয়াল রে দেখেছি মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের যে চন্ডীপাঠ আমরা শুনি, এবং সেই শোনার যা অনুভব যা নির্মল আনন্দ, বছরের অন্য কোনো দিনের অন্য কোনো ভোরে সেই চন্ডীপাঠ শুনে সেই একই অনুভব হয়না, হয়নি আমার এই ব্যাপারটা লেখাটায় রাখতে চেয়েছিলাম ঠিকঠাক ভেবে উঠতে পারিনি 'লে লিখতেও পারিনি কিন্তু কাছে এসেছিলো তাড়নাটা এসে, ভিড় বাসে বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকার মতো দাঁড়িয়েছিলো আসলে লেখালেখিতে শুধু সরস্বতী নয়, বিশ্বকর্মার দয়াও চাই





১৯ ২০ আগস্ট, ২১ আগস্ট রাত টায় ।।মেসে।।


বাড়ি গিয়েছিলাম বরাবর বাড়ি গিয়েই আমি মাকে জিজ্ঞেস করি পাড়ার কি খবর অনেকসময়ই তেমন কিছু খবর থাকেনা, এবার কিন্তু ছিলো হেমলতা আমার চেয়ে বছরপাঁচেক বড়ো আমাদের ঠিক পাশের বাড়ি ওদের আমাকে আর ভাইকে কোলেকাঁখেও করেছে, আর প্রাইমারি স্কুলে অনেক দেরি রে ভর্তি হয়েছিলো আমার সঙ্গে ক্লাস ওয়ানে (তখন ছোটো ওয়ান বলা হতো তারপর বড়ো ওয়ান তারপরে ক্লাস টু) আমাকে বারবার ঠেলছিলো লে শার্পনার দিয়ে পেন্সিল শার্প রে আমি যখন নয়নের কানের লতি রক্তাক্ত করে দিয়েছিলাম, আমাকে প্রোটেকশন দিয়েছিলো, “ নু জ্যোতি বাইত্তে জাইগা!!” ( নু = চল, বাইত্তে = বাড়িতে ) লে পাটক্ষেতের মধ্য দিয়ে আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলো ২০১২ সাল, আমি ধুপগুড়িতে থাকছি, হেমলতার বিয়ে হলো পাশের পাড়ার পরাণের সঙ্গে আর আমি যখন জলপাইগুড়িতে চলে এলাম, ২০১৩, বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে পরাণ মারা গেলো হেমের তখন সাত-আট মাসের গর্ভ পুত্রসন্তান জন্ম দিলো খেতজমিতে কাজ রে ছেলে নিয়ে বাপের বাড়িতে থাকতে লাগলো শুনলাম ছেলেকে রেখে হেম কার সঙ্গে কোথায় চলে গেছে দিন থেকেই নাকি হেম বেশ হাসিখুশি ফোনে বেশ কথা বলতে দেখা যাচ্ছিলো কার সঙ্গে কলকাতায় নাকি গেছে ওর ফোন বন্ধ ওর ছেলেটার এখন বয়েস চার বছর


যে ভালোবাসেনা, তার বুকেও তো ফুরুশ ফুল গোলাপি রঙে ফোটে


২৫ আগস্ট

লেখাটা জেনে যায় যে কেউ ওকে লিখছে এই যে আমার বসবাসের গল্পগুলো লিখছি, যেটা বেশ একঘেয়ে লাগছে, এটা কিন্তু আমি আসলে কোনোলেখাতৈরি করতে চাইছিলামনালেখক জ্যোতি, ব্যক্তি জ্যোতি আর তার লেখাএই তিনজনের সমারোহে একটা প্রদত্ত টাইম স্পেসে কী ঘটে চলেছে তার একটা সেলফি নিতে চাইছিলাম কিছু অক্ষর বাক্য দাড়ি কমার সাহায্য নিয়ে বলা যাক, আমাকে বলা হলো মোটামুটি অ্যাতো থেকে অ্যাতো তারিখ অব্দি তোমার যাপনটা তুমি লেখো তাতে সবকিছু থাকবে তোমার প্র্যাকটিক্যাল অ্যাক্টিভিটিজ আর চিন্তনপ্রবাহ
কিন্ত সবকিছু সাজগোজ রে উঠতে চাইলো, সিমেট্রিক্যালি অথচ সত্যিকারের কনফিউশন, যা আঁকাটাই পরম কর্তব্য, হয়ে উঠলোনা সত্যের মধ্যে থেকেও সত্যকে আত্মস্থ করা গেলো না

তাই আমি যেন লেখাটাকেও না রে দিলাম মানস যাপন যখন ডামাডোলে দোলে দোদুল, তখন আমি কী লিখছি...

পরে কখনো ওর সাথে দেখা হবে


আবার বাইরে ৩০ আগস্ট সন্ধ্যা

[আরেকটু গল্পই হোক তবে গল্প হলেও সত্যি আসলে (নকলেও আমার নকলপনাও তো আমারই বিষয়) আমি আমার বর্তমান পদ্যবোধ, পদ্যলিখনকর্মাদি দূরে ছেড়ে ফেলতে চাই]

আমার মেসে আমারটা বাদে বাকি রুমগুলো ফাঁকা 'রে আছে দীর্ঘদিন ইদানিং কেউ কেউ এসে দেখে যায়, যারা বাইরে থেকে এসে জলপাইগুড়ির কলেজগুলোতে ফার্স্ট ইয়ারে সদ্য ভর্তি হয়েছে ইতিমধ্যে জলপাইগুড়ির সাংসদের মধ্যস্থতায় গত সোমবার ক্লাস শুরু হয়েছে আজ ১১টা থেকে ১টা অব্দি বিনায়ক স্যারের ক্লাস রে ফিরে এসেছি আলু, পেঁয়াজ, বেগুন, লঙ্কা, পটল, সব কেটেকুটে চালে দিয়ে স্টোভে বসিয়ে দিয়েছি তাতে কিছু ডাল, একটু নুন জিনিসটা খুব প্রিয় যাহোক একটা কিছু হয়, মেখে খেয়ে নিই তো বসিয়ে দিয়ে খবরের কাগজটা হাতে নিয়েছি বাড়ির কুকুরটার সৌজন্যে The Statesman-এর বেশ কয়েকটা পাতা খবরের ওপর ক্ষত নিয়ে মলিন হয়ে আছে কিছু করার নেই সকালের প্রথম পাঠক তো জাপান ভূখণ্ডে উত্তর কোরিয়ার মিসাইল ফেলার খবরটা পড়ছি দরজায় আওয়াজ কাকিমা ডাকছে সাথে আর কারুর আওয়াজ বুঝলাম কেউ রুম দেখতে এসেছে ডাবল বেডের রুম, আমার পাশের বেডটা দেখবে দুজন নেপালি আর ১জন বাঙালি যুবক নেপালি দুজন দরজার বাইরে থেকেই ঘরটাকে জরিপ করতে লাগলো বাঙালি ঘরে ঢুকলো একথা সেকথা জিজ্ঞেস করে আমি উত্তর দিই নাম জিজ্ঞেস করি, বলে থাকাখরচ জিজ্ঞেস করায় আমি কাকিমাকে দেখিয়ে দিই স্টোভে হাড়ি উতলা হয়, ঢাকনা নামিয়ে দিয়ে আবার ফ্যানের সামনে বসি এর মধ্যে কাকিমা নেপালি ছেলে দুটোকে পাশের রুম দেখাতে নিয়ে গেছে বাঙালি ছেলেটি কিন্তু গেলোনা আমাকে প্রশ্ন রে যাচ্ছে আমিও উত্তর দিচ্ছি আমি কি পড়ছি, অ্যাতো বই কিসের, রান্না রে কেন খাই... এইসব আমি পেপারে চোখ রেখে ক্যাজুয়ালি উত্তর দিচ্ছি ছেলেটি হঠাৎ বললো- দাদা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
-হ্যাঁ বলো ওর দিকে তাকালাম আমার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি করো?”
আমি বুঝলাম না কী জানতে চাইছে, জিজ্ঞেস করলাম, “কী করি?”
আমার পরনে লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি
ছেলেটা আমার পেনিসের অবস্থান আন্দাজ রে আমাকে বাধা দেয়ার সুযোগ না দিয়ে সেইদিকে একটা হাত বাড়াতে বাড়াতে আবার জিজ্ঞেস করলোতুমি করো?!” শক্ত 'রে চেপে ধরলাম হাতটা ওর গলায় আর্তির সুর এবং আমার পাশে ঘেসে সে পরলো বুঝলাম কী চাইছে এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একটা অদ্ভুত বিব্রত পরিস্থিতিত 'রে গেছি ভাত ফোটার শব্দ কানে ঢিল ছুড়ছে, শান্ত স্বরে বললাম, “না ভাই যা ভাবছো আমি সেরম নই সরি

ছেলেটা উঠে চলে গেলো

ওরা চলে যাবার পর ঘটনাটা নিয়ে ভাবলাম কী হলো ব্যাপারটা? একজন মানুষ যার শরীরটা পুরুষের কিন্তু মনন, চেতন, চাহিদা একজন নারীর মতো, কিংবা উল্টোটা বায়োলজিক্যালি স্বাভাবিক কিন্তু ভারতীয় সংবিধান, ধর্মের ধ্বজাধারীরা একে প্রকৃতি ধর্মবিরুদ্ধ বলে তাই ব্যাপারটা সামাজিকভাবে স্বাভাবিক তে পারেনি যে কারণে আমি সমকাম বিষয়টিকে সমর্থন করলেও ছেলেটির আচরণে অপ্রস্তুত কিঞ্চিৎ ক্রুদ্ধ হয়ে পরেছিলাম কিন্তু এর মধ্যেও দুইখান কথা আছে . কাউকে ভালোলাগলেই বা এমনকি তার কাছ থেকে শারীরিক সুখ পেতে ইচ্ছে করলেই কি এইরকম একটা অ্যাটেম্পট্ নেয়া যায়? না মনে হয় সে যে লিঙ্গেরই হোক


. যদি ছেলেটির জায়গায় একটি মেয়ে থাকতো আমি কি একই প্রতিক্রিয়া দিতাম? নাকি ওর হাতের স্পর্শে আমার পুরুষাঙ্গ মুহূর্তে দৃঢ়, ঋজু অশান্ত হয়ে উঠতো এবং পরবর্তী দৃশ্যগুলো যথাক্রমে অনুষ্ঠিত হতে থাকতো? আমি জানিনা


4 comments:

  1. দারুন বলা কি যায়? ডাইরী তো?
    কিন্তু রোজনামচার গদ্য অপূর্ব! যা 'দারুণ'বলার দাবী রাখে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ডায়েরীই।অন্যরকম করে একটু লেখার চেষ্টা।হ্যাঁ,দারুণ বলতে পারিস।

      Delete
  2. বাহ...ভাই। এক আত্ম লেখা, সব সময় ই ভালো লাগে আমার।

    ReplyDelete