বাক্‌ ১১৫ ।। শিশ্ন আর শুশুনিয়া ।। দেবাঞ্জন দাস




পোশাক খুলে মেয়েটা ক্রমশ দাঁড়াচ্ছে সোজা হয়ে। কিমানো, স্টকিং, ইনারস ... প্যান্টিটা গোলাপিজীবনকে ছোঁবে বলে ছেলেটা দুটো ডিম ভেঙ্গে কুসুমগুলো বুকের উপর রাখল ... বুক গেল ওড়না আনতে। দুটো কাঠের টুকরো। খাটের দুপাশে দুটো। টানা দিয়ে দড়িটা মাঝখানে ... একটা কপিকল ... দড়ির দুপ্রান্ত মেয়েটার দুপায়ে বাঁধা। মেয়েটা ছেলেটাকে শিশ্ন বলে ডাকে। ছেলেটা ওকে শুশুনিয়া। শিশ্ন বলল চলো আমি সামিট করব। শুশুনিয়া ফাঁক করা পা দুটো পলকে গুটিয়ে নিলোকপিকল বেয়ে সোজা নিচে ... পড়তে পড়তে শিহরিত হচ্ছে শিশ্ন, সেই শীত ও স্যাঁতস্যাঁতে অনুভূতি, রান ও রক্তের কথা .. ভাবছি একার গায়ে যখন ফুল ফোটে তখন আকাশটা কিভাবে নিচু হয় প্রতিবার .. তখনি শুশুনিয়া পা ফাঁক করে দিল। সামিট থেকে হাত খানেক উপরে ভাসছেআক্রোশ একটা গরররর হতে চাচ্ছে গলায়.. তাকে বলছি ফর এ্যাপল’, ‘বিফর ব্যাডএন্ড ফাইনালি সিফর ক্যাট’...  
দ্যাখো পর্ণোগ্রাফির জন্য একটা ছেলে এবং একটা মেয়ে দরকার। অথবা দুটো ছেলে। অথবা দুটো মেয়ে। অথবা একটা ছেলে এবং একটা ট্রান্সসেক্সুয়াল। অথবা একটা ট্রান্সসেক্সুয়াল এবং একটা মেয়ে। অথবা দুটো ট্রান্সসেক্সুয়াল। একটা টপ একটা বটম। একজন ডমিনেটিং একজন ডমিনেটেড। উদ্বৃত্ত মূল্যের প্রশ্ন কি আসছে, কমরেড? সমাজ আর জীবন তো এনজয়মেন্ট নিয়ে পালালো। তোমার নাসিকা কুঞ্চন, ঘৃণা আর অবজ্ঞার ফাঁকে যে উন্নাসিকতা থাকে তাকে আমি উদ্বৃত্ত ধরলাম। ওড়না আনতে যাওয়া বুক এবার ফিরে এলো পায়ে পায়ে। 
মেয়েটার এক হাতে কপিকলের ছেঁড়া দড়ি। অন্য হাতে কপিকল। তৃপ্ত মুখ। পাকা আমের মত। বোঁটায় ঝুলছে কিন্তু আসলে পড়ে যাবে। এই ফলের এ্যানালজি আমার বেশ প্রিয়। হুইস্কির নেশার মত। নেশাতুর হেঁটে যাওয়াকে মনে হয় পাকা আমের দোলা। নিপল দেখলে আঙুরের কথা মনে পড়ে। তাই কপিকলের দৃশ্যটা দেখতে দেখতে বারবার আমি মেয়েটার আঙুরে আটকে যাচ্ছিলাম। ভাগ্যিস কলা খেতে ভালোবাসিনা। নাহলে আবার ১৮০ ডিগ্রির থাম্বরুল ব্রেক করে এ্যাক্সিস চেঞ্জ করতে হত। এরফলে প্রেফারেন্স অফ চয়েস যেত গুলিয়ে। বোঝা যেত না, কলা না আঙুর কোনটাকে প্রেফারেন্স দিচ্ছে আমার চোখ। চোখ তো দেখে না। দেখে মাথা। যেমন আমি মেয়েটার আঙুর ছাড়া আর কিছু দেখছিনা। মাথা তারপর ক্যালাইডোস্কোপিক ইমেজগুলোকে জুড়তে থাকে। দেখতে পাচ্ছি ছেলেটার হাতদুটো মেয়েটার আঙুরের দিকে নেমে আসতে চাইছে। এই নেমে আসতে চাওয়া প্রায় চিরকালীন। হাত নেমে আসতে চাইবে কিন্তু কখনওই পৌঁছতে পারবে না। একবার পৌঁছে গেলে আঙুর তার মাহাত্ম্য হারিয়ে ফ্যালে। আমি যেমন রূপাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। শেয়াল হারিয়েছিল আঙুর। তাই ইমেজ থেকে একটু সরে আবারও ন্যারেটিভ। গল্পই জীবনকে জীবন করে তোলে। তা নাহলে সে এক গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মাত্র। যে ডেঙ্গি দেখছে আর তিনটে ডট দিচ্ছে ... বলছেমশাদের ভালোবাসা হোক। মানুষের রক্তে ডেঙ্গি ঘনত্ব কমাচ্ছে, তারা পটল তুলছে। অবশ্য পেস্টিসাইড খেয়েও মরতে পারত। বা পাঁচদিন খেতে না পেয়ে। অথবা এই একটু মরার ইচ্ছে হয়েছে বলে। কেবল তিনটে ডট লিখতমশাদের  ভালোবাসা হোক। আমার দেখা কিছু যায় আসতনা। আমি আমার রিয়েলিটিকে ম্যাজিক বা ফ্যান্টাসিতে পালটে নিতাম।    
যেমন এখানে ভালোবাসার কথাই লিখতে চাই। মেয়েটা ধানতলা থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার ভিতরে এক অজ পাড়াগাঁয় থাকত। বাড়িতে ওদের তিনজন—বাবা, মা আর মেয়েটাএকটা কলোনিতে দরমার ছোট্ট বাড়ি, বাবা মুনিষ খাটে। সম্ভবত ওরা রিফিউজিই হবে। তবে মেয়েটার জন্ম এদেশেই। রাতভর হরিব্বোল করতে করতে ঠাকুরনগরড্রাম, কাঁসি .. এক অদ্ভুত দুলুনি আর মুখে হরিব্বোল ধ্বনি। মেয়েটি ওদের কলোনির হরিব্বোল দলে কাঁসি বাজাত। ভালো ভাবে পাশ করেছিল মাধ্যমিক। যে বয়সে সব গাছের পাতা রঙিন লাগতে থাকে সে’সব দিনে ওর দ্যাখা হয় বিমলের সাথে। বিমল ড্রাম বাজাতো হরিব্বোলের দলে। প্রতিবছর দেখা হত মেলায়। সবাই যখন স্নান করে মন্দিরের পথে, সূর্য যখন গাছের ফাঁকে চৌখুপী আলো তৈরি করেছে, ওরা ব্যস্ত হত সেই ঘরগুলোর দরজা খোলার জন্য। আস্তে আস্তে বিমল ওদের বাড়িতেও যাওয়া শুরু করল। মেয়েটা পর্দার রঙ মেলাতে শিখল। শিখে নিলো কোন রান্নায় কোন ফোড়ন। তখনও সূর্য চৌখুপী তৈরি করছে ওদের দরমার বেড়ায়, তখনও মেয়েটি আঙুর বললে লতা হয়ে যায়। মেয়েটি উচ্চমাধ্যমিক পাশ করল। পড়তে এলো কলেজের হস্টেলে। তারপর একদিন হঠাতই  আগুনে ছাই হল ওদের কলোনি। বেবাক পুড়ে মরল বেশ কয়েকটি মানুষ। সেদিন বিমলও ওদের বাড়িতেমেয়েটির মাকে ডাক্তার দেখাতে এসে থেকে গিয়েছিল। সেই একটা রাত .. সেই রাতের পর সূর্য মেয়েটির মাথায় উঠে এলো বরাবরের জন্য। সে আর কোনদিন নিজের ছায়াই দেখতে পায়নি ... মা, বিমল, বাবা তো দূর অস্ত ... কলেজের পড়া বজায় রাখতে মেয়েটি একটা বাড়িতে কাজ করতে শুরু করে। থাকা, খাওয়া, পড়ার সুযোগ, মাসিক অর্থ .. তার পরিবর্তে পঙ্গু যুবক প্রভুর দেখাশোনা। কিন্তু মানুষ যখন ছায়া দেখতে পায়না তখন বুঝতেও পারেনা যে সে দাঁড়িয়ে আছে না হাঁটছে। তখন এক প্রলম্বিত নাম্বনেস তার অস্তিত্বকে সূচীত করে। মেয়েটিরও কোনও সাড়া ছিলনা। কেবল বেঁচে থাকাটুকু তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। তাই একদিন সে ঘরের কাজের সাথে সাথে বিছানার কাজও শুরু করলআমরা ভাবলাম কলেজের পড়াটা বাঁচিয়ে রাখতে এ’ছাড়া ওর আর কোনও উপায় নেই। কিন্তু পড়া বজায় রাখতে বিছানায় কেন শুতে হবে?        
ইস্‌ .. আজকের দিনে এত প্রকল্প .. সরকারি-বেসরকারি সাহায্য তারপরেও এহেন মেলোড্রামা কেন?
এর উত্তরে আমি আমার সেই বন্ধুর বা হয়ত আমার নিজের কথাই ভাবিযে তার থেকে কলেজে এক ইয়ার সিনিয়রকে তার নিজের বেডরুমে লাগাতে লাগাতে কিছুক্ষণ আগে সিনেমা হলে প্রেমিকার থেকে নেওয়া ব্লোজবের গল্প বলেছিল। এহেন উত্তেজক গল্প ও সঙ্গমের বিনিময়ে সেই এক ইয়ার সিনিয়র মেয়েটা উকিল বাবার সেলার থেকে চুরি করে প্রথম স্কচ চাখিয়েছিল ছেলেটাকে।  
দ্যাখো বস .. ইফ এজুকেশন ইজ দ্য ইজিয়েস্ট ওয়ে টু আর্ণ দেন হোয়াই নট সেক্স?? তাছাড়া আমি তো মেয়েটার গল্প বলছি! গল্প কখনও জীবনের ছায়া হয়না। সে জীবনকে প্রক্ষেপিত করে। তাকে একটু বড়সড় হতে হয়।  
মেয়েটা বিছানায় শুয়ে থাকত আর পায়ের দড়িতে বাঁধা কপিকলের সাহায্যে ছেলেটার সাথে সেক্স করত।

মেয়েটার দুহাত মাথার নীচে বালিশের উপর।
ছেলেটার দুহাত শূন্যে ঝুলছে। প্রায় অবশ নিয়ন্ত্রণহীন ভেসে থাকা।
ছেলেটা মেয়েটার নিপলের দিকে এগোতে চায়।
মেয়েটা পাশের রামমন্দির থেকে ভেসে আসা কীর্তনের তালে কপিকলের গতি বাড়ায়।
মেয়েটার মাথার উপরের দেওয়ালে যামিনী রায়ের একটা জাল ছবি।
ছেলেটা মৃদু গোঙানির সুরে শীৎকার তোলে।
মেয়েটার যোনি সম্ভাব্য মিলনের আকাঙ্ক্ষায় থর থর করে কাঁপে।
ছেলেটা যৌন ক্রিয়াকে প্রলম্বিত করার জন্য উত্তেজক কথা বলতে থাকে।   
দড়ির টানে মেয়েটার পা ব্যথা হয়ে যায়টান থামিয়ে, সে দুহাত দিয়ে থাই টিপতে থাকে।
ছেলেটা শূন্যে ভাসছে। তার মুখ থকে একটা রাগী গররর.. শব্দ বেরোচ্ছে।

ছেলেটা বেঁচে থাকতে চায় তাই সেক্স করতে চায়। কিন্তু পারেনা। মেয়েটা বাঁচতে চায় তাই শুয়ে থাকে।

শুয়ে থাকা দিন দিন ক্লান্তিকর হচ্ছিল মেয়েটার পক্ষে। মেয়েটা একদিন ভেবেই ফেলল ঐ লোকটার সাথে চলে যাবে। ঐ লোকটা নিশ্চয় তাকে টাকা এবং সেক্সের সাথে একটু স্বস্তি দেবে। মেয়েটা ভালোবাসার অভিনয় করতে পারবে। সেইমত ও প্রস্তুতি শুরু করল।
অন্যদিকে ছেলেটাও বুঝতে পারছিল, মেয়েটা ক্রমশ সরে যাচ্ছে। ও ভয় পেল। ভাবলএবার আর লুকিয়ে রাখা যাবেনা। বলতেই হবে। নাহলে হয়ত ও চলেই যাবে।
সেই রাতে কপিকলে ফিট হওয়ার আগে ছেলেটা ডাকল মেয়েটাকে। বলল, দ্যাখো শুশুনিয়া, আমি বুঝতে পারছি, তোমার এই কপিকল-সেক্স আর ভালো লাগছেনা। কিন্তু এর পিছনে একটা মিশন আছেতোমাকে এতদিন বলিনিএই কপিকল-সেক্সের মাধ্যমে তোমার হাড় ক্লোন হবে আমার শরীরে। আমি সুস্থ হয়ে উঠবোআর তুমি পাবে অক্ষয় যোনি ও যৌবন। তুমি আমার কথা বিশ্বাস কর, আর মাত্র সাতদিন অপেক্ষা কর। আর যদি আমার কথা না শুনে চলে যাও তাহলে আমার মৃত্যুর সাথে সাথে তোমারও যোনিমুখ বরাবরের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। স্তব্ধ হবে সৃষ্টি।
একথা শোনার পর আমি ভেবেছিলাম মেয়ে চরিত্রটাকে আমি একটু ভয় পাওয়াবো। এই যেমন হয় পৌরাণিক সিনেমা বা সিরিয়ালে—একটু বজ্র বিদ্যুৎ চমকাবে, একটু ঘণ্টাধ্বনি, ফ্রেম জুড়ে ইনএনিমেট অবজেক্টের প্রাবল্য এবং ডিম লাইট ... কিন্তু সিনেমা আর সিরিয়ালের চক্করে আমি ভুলে গেছিলাম কখনও কখনও কলমের ফাঁক গলে চরিত্ররা এ্যাক্ট করে। সেরকমই এক ফাঁক গলে মেয়েটা রিভোল্ট করে বসল।
আমি বিপদে পড়লাম।
লেখা জমা দেওয়ার সময় ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে। কিছু একটা আমাকে করতে হবে ... ঠিক আছে আপাতত মেয়েটাকে এ্যালাউ করি ... ফাইনালি পরে হিসেব বুঝে নেব ... 
শুশুনিয়া তখন শিশ্নকে মুচকি হেসে বলল, সৃষ্টির কথা ছাড়ো। সেই ফার্টিলিটি কাল্টের ট্র্যাপ আজকে লাচার। মাঠে মাঠে কৃষকের মৃতদেহ দেখছ? আমি চাইনা তুমিও তেমন পড়ে থাক। ঠিক আছে আর নাহয় সাতদিন সই ...  
শুশুনিয়ার এই কথার ছদিন পর আমি গিয়ে ওদের কিহোলে চোখ রাখলাম। আমাকে তো শেষ করতে হবে! কখনও শুশুনিয়া, কখনও শিশ্ন, কখনও ফার্স্ট পারসন, কখনও ন্যারেটার... সেখানে পাঠক আপনারা নিশ্চয় এবার এগিয়ে আসতে চাইবেন। আমার এবার অন্তরালে যাওয়া প্রয়োজন।
কিহোল দিয়ে আমি দেখলাম উলঙ্গ শুশুনিয়া পা দুটো কাঁচির মত ছড়িয়ে শুয়ে আছে। শিশ্ন কপিকলের দড়িসহ পাশে ছেতরে পড়ে অঝোরে অনুনয়-বিনয় করে যাচ্ছে। শুশুনিয়া বলল, সৃষ্টি কখনও স্তব্ধ হয়না নির্বোধ, প্রয়োজনে স্রষ্টা বদলে যায়। ঠিক সেই সময়েই শুশুনিয়ার ঐ লোকটা ঢুকল ঘরে। শুশুনিয়াকে কোলে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ...    
শুশুনিয়াকে নিয়ে লোকটি কোথায় গেল? কি বা তার নামধাম .. জানার জন্য আমি সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলাম.. কিছুদূর যাওয়ার পরেই দেখি সিঁড়ি শেষ হয়ে যায়, গল্প শেষ হয়ে যায়...


                                        (চিত্রঋণ : Edvard Munch ) 

No comments:

Post a Comment