বাক্‌ ১১৫ ।। ফ্যাদা ।। জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়




অ্যামোনিয়াম ডাইক্রোমেটে আগুন ধরিয়ে দিতেই শোঁ শোঁ করে শব্দ, আগ্নেয়গিরির মুখ থেকে গরম লাভা বেরিয়ে আসার মত আগুন গলে গলে বেরিয়ে এলো। আর তার সঙ্গে কমলা রঙ বদলে গিয়ে পড়ে রইল একদলা শ্যাওলা সবুজ। 
কেমিস্ট্রিতে অ্যামোনিয়াম ডাইক্রোমেটের 'ভলক্যানিক রিয়্যাকশন' আর ভূগোল ক্লাসে আগ্নেয়গিরির চ্যাপটারটা একই দিনে পড়িয়েছিল। সেদিন রাতে মর্জিনাকে 'হায় হায় প্রাণ যায়' গাইতে দেখে কেমন অন্যরকম লাগল। রাতে শোয়ার পরেও গানটা আর গানের তালে তালে আরও অনেক কিছু ভেসে আসছিল চোখের সামনে। একটা সম্পুর্ণ সাদাকালো ছবির শুধু এই গানটাই রঙিন, রঙিন হয়েই থাকবে। সিনেমা যতই পুরনো হোক না কেন... প্রিণ্ট যতই খারাপ হোক না কেন; রঙিন মর্জিনা নাচতে নাচতে শরীরে ঢেউ তুলে এগিয়ে আসবে... খঞ্জর বসিয়ে দেবে বুকে। খঞ্জরের থেকেও ধারালো রঙিন যৌবন, ক্লাস সেভেনের  ছেলেটাকে ঘুমোতে দিচ্ছিল না।  বার বার হাফ প্যাণ্টের ভেতর চলে যেতে চাওয়া বাঁ হাতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে ঘেমে যাচ্ছিল। রাতে দু'বার উঠে জল খেলো, তিন বার গেল বাথরুমে। তারপর যখন চোখে ঘুম এলো তখন আকাশে আলো ফুটে এসেছে। কিসের সঙ্গে যুদ্ধ করছিল, কে জিতল আর কে হারল... তা বুঝতে পারছিল না বলেই পরের দিন স্কুলে যাওয়ার পরেও ক্লাসের কোনও টিচারের কথা সেভাবে কানে পৌঁছল না। আবার দেখতে ইচ্ছে করছিল রঙিন মরজিনাকে। মনে মনে নয়, সত্যিই টিভিতে... চোখের সামনে দেখতে ইচ্ছে করছিল রঙিন গান, রঙিন শরীর। আর কেউ একটা বার বার কানের মধ্যে বলছিল 'ছিঃ!' সেদিন রাতে খাবার সময় টিভিতে কোনও সিনেমা চলছিল না। আগামী শনিবার কী সিনেমা দেখানো হবে তার বিজ্ঞাপনে দেখালো 'দো অনজানে'; অমিতাভ আর রেখা। সিনেমাটা দুপুরে, স্কুলে থাকবে সেই সময়। দেখা হবে না। সেদিন রাতেও শোয়ার পর মর্জিনা, রেখা... অস্থির ঘাম নিয়ে পাশ বালিশ জড়িয়ে চোখ বন্ধে করে থাকা। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল জানে না। দেখল মামার বাড়িতে গেছে। সেই মামার বাড়ি, ৫ বছর আগে যেমন ছিল, তখনও দোতলা হয়নি। পুরনো আমলের সিলিং ফ্যান ঘুরছে। কাজের মাসি লোহার বালতিতে কাপড়ের ন্যাতা ডুবিয়ে তারপর সেই জল নিংড়ে নিলো বালতির ভেতর। ন্যাতাটা নিয়ে ঝুঁকে পড়ে ঘরের মেঝে মুছতে শুরু করল। সামনে ঝুঁকে পড়লে ভারসাম্য রাখা মুশকিল হয়, গোড়ালি তুলে সামনে ঝুঁকে পড়ছিল কাজির মাসি। তারপর উবে হয়ে বসে ন্যাতা দিয়ে টেনে টেনে মুছছিল মেঝে। লাল পালিশ করা মেঝে। মাসির পিঠে হালকা লোমের রেখা দেখা যাচ্ছে। কোমরের পাশ থেকে পেটের হালকা চর্বি। হঠাৎ সামনে গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে করল মাসির। কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই চমকে উঠল। শাড়ীর আঁচল সরে গিয়ে ব্লাউজের ওপর থেকে বাদামী বুক দেখা যাচ্ছে। মেরুন রঙের ব্লাউজের নিচে পেট আর স্পষ্ট গভীর নাভী - ন্যাতা মোছার তালে তালে দুলে উঠছে। দুলে উঠছে বুক, দুলে উঠছে নাভি। মাথাটা মেঝের দিকে ঝুঁকিয়ে এক মনে ঘর মুছে যাচ্ছে মাসি, মুখ দেখা যাচ্ছ না। আরও  কাছে গিয়ে পেটটা ছুঁতে ইচ্ছে করল। ভীষণ ইচ্ছে করল। আর, হাত বাড়াতেই মুখ তুলে তাকালো মাসি। কাজের মাসি কোথায়?! এ তো রেখা! বাড়ানো হাতটা তার পেট ছুঁতেই 'ভলকানিক রিয়্যাকশন'কমলা রঙের লাভা গড়িয়ে পড়ল শ্যাওলা রঙের পাহার বেয়ে। ফ্লাফি গ্রীন মাস। বুকের ধুকপুকটা বাড়তে বারতে হঠাৎ তলপেটের নিচে চলে গেল। যা আগে কোনওদিন হয় নি! কখনও না। 
চোখ খুলে ঘর তেমনই অন্ধকার। পাশবালিশের মাঝের অংশটি খামচে ধরে আছে বাঁ হাত। আর প্যাণ্টটা ভিজে... উষ্ণ। গরম মোমের মত কিছু গড়িয়ে পড়েছে জেগে ওঠা মোমবাতি থেকে। 

                                                                                                                                                                                     --- --- --- 

স্বপ্নরা আসে। মাঝে মাঝেই আসে। শুধু রাতে নয়, ছুটির দিনে দুপুরেও আসে। কিন্তু স্বপ্ন যে এইভাবে কিছু দিয়েও যেতে পারে, তা জানা ছিল না। আগে কোনওদিনও আসেনি এভাবে।  সেই রাতটা রেখাকে নিয়ে চলে গেলো, সারাদিন যে হার-জিতের লড়াইটা ভেতরে ছটফট করছিল, তাও মিশে গেল ঘুমের মধ্যে। সকাল বেলা ঘুম ভাঙার পর সেই ভিজে ভাব আর নেই, প্যাণ্টে একটা কড়কড়ে দাগ থেকে গেছে। কোন কাব্য বা থ্রিল না; একটা রিলিফ আর একটা আশংকা। সকালে পড়ার বই ব্যাগে গুছোতে গুছোতেও বার বার এক প্রশ্ন - কী হ'ল ওটা? কেন হল? চান করতে গিয়ে বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখা... কিছু হয়নি তো? 
সেই গভীর ঘুম আবার ফিরে এলো... আর অন্যরকম স্বপ্ন এলো আবার কিছু রাত পরে। না, সেই স্বপ্নটা নয়, এবারে অন্য কিছু। তার সাত আট দিন পর আবার একবার। তার পাঁচ দিন পর আবার। তারপর একদিন রবিবার দুপুরেই। এবারে ভয় হ'ল... 'আমি তো ঘুমোচ্ছি। কিন্তু যারা জেগে আছে... কেউ যদি দেখে ফেলে?!' কেমন একটা স্টিমুলাস-রেসপন্স প্রোগ্রাম হয়ে গেল। স্বপ্ন এক সময় ভাঙবেই! আর ভাঙলেই সবার আগে কাৎ হয়ে, দুমড়ে হাঁটু মুড়ে ঢেকে নাও নিজেকে। তারপর সুযোগ বুঝে তরাক করে উঠে সোজা বাথরুমে। সাবধানে ধুয়ে ফেলো। সাবধানে! প্যাণ্ট ভেজা, তা দেখলেও কিন্তু প্রশ্ন আসবে... পালাতে পারবে না তখন। ধরা পড়ে যাবে তোমার ঘুমের মধ্যে এই নাবালক স্বেচ্ছাচার! 
কোনও কোনও স্বপ্ন একটা ভয়ানক নিষ্ঠুর অপূর্ণতা দিয়ে যেত। চরম মুহুর্ত ছোঁয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই টেনে নামিয়ে আনবে ঘাম আর বিছানার মাঝে; কখনও কখনও সঙ্গে সঙ্গে... আবার কখনও আলতো করে, যেমন পালক বাতাসে ভাসতে ভাসতে মাটিতে এসে পড়ে । কি নিষ্ঠুর, স্বার্থঃপর! অথচ সেই ভাল লাগার মাঝে আরও অনেকক্ষণ থাকতে ইচ্ছে হ'ত। আবার চোখ বন্ধ করে ফিরে যেতে ইচ্ছে হ'ত সেই জগতে। তাকে ছুঁয়ে, তাকে জড়িয়ে, তার মধ্যে ডুবে থাকতে ইচ্ছে করত আরও অনেকক্ষণ... যা বাস্তবে কোনওদিনই সম্ভব নয়। সে অপরিণত চিন্তা? সে পাপ? সে ঋপুগ্রস্ত তমসুখ? হোক! কিন্তু ওই ভাল লাগাগুলো ওইখানেই পাওয়া গেছে, ওইখানেই থেকে গেছে। চাইলেও আর পাওয়া যাবে না অন্য কোথাও। 
চরম মুহূর্ত তো আমি চাইনি সব সময়, আমি না চাইতেও এসেছে চরম বিরক্তি নিয়ে এই ভেজা হাফ প্যাণ্ট। আমি শুধু চেয়েছিলাম সেই নতুন চেনাগুলোর মাঝে থাকতে... অপূর্ণতাগুলো এই অন্য পাওয়ার দেশে পান করতে। পেট ভরে, একেবারে বমি না হওয়া পর্যন্ত পান করে যেতে। 

     তবে সত্যি বলছি, এখন ওই ভিজে ভাবটা মনে পড়লেও বিরক্তি লাগে। কখনও এই ভিজের মধ্যে ঘুম ভাঙলে যে কী ফালতু লাগে... নিজেকে খিস্তি দিই, নিজের মাথাচোদানো চিন্তাগুলোকে খিস্তি দিই, স্বপ্নগুলোকে খিস্তি দিই, বাড়াটাকে খিস্তি... সালা একটা স্বপ্নের মধ্যেও টিকে থাকার ক্ষমতা নেই। আসলে বিরক্তিটা ছিল, একটু একটু করে জমেছে অনেক রাত ধরে। রাতে ঘুম ভেঙে গেলেই দেখা যেত ভিজে। বিরক্তিকর লাগত প্যান্টের ওই অংশটা জলে ধুয়ে আবার ফিরে আসা। ওই প্রথম কাপড় কাচতে শেখা। খালি চোরের মত প্যাণ্টের দিকে তাকিয়ে দেখতাম কিছু বোঝা যাচ্ছে কি না। এই বুঝি ধরে ফেলল কেউ। মনে হ'ত আরও ভাল করে ধুতে হবে... আরও ভাল করে, যাতে দাগটা একদম না বোঝা যায়। ঘুম চোখে অপরাধীর মত হাতড়ে হাতড়ে অন্ধকারে এগিয়ে যেতাম বাথরুমের দিকে। কোনওরকম শব্দ না করে চেষ্টা করতাম জল দিয়ে... তারপর আবার ফিরে আসতাম। আরও বেশি ভেজা প্যাণ্ট নিয়ে শুতে। বিচ্ছিরি একটা ভেজা ভাবের সঙ্গে সহবাস। 
তারপর একদিন সব দায়িত্ব নিজের হাতে নিলাম। নিজের হাতে। হ্যাঁ... তখন থেকে ঝামেলাটা কমে গেল। এর জন্য অন্য রকম কিছু ঝামেলা, চুরি-জোচ্চুরি, চালাকি... সব এসেছে। কিন্তু ওই গা ঘিনঘিন করা ভেজা রাতগুলো দূরে ঠেলে দিতে পেরেছিলাম। অনেক দূরে। 

    আসলে এত কথা এখন মনেই পড়ত না। এই বোটকা গন্ধ আর মশার ভ্যানভ্যানের মাঝে দু'দিন ধরে এক জামা-প্যাণ্ট পরে বসে থাকলে কারও মাথায় যদি ঠাপানো, হাতমারা, চুদুরবুদুর... এইসব মাথায় আসে তাহলে তার লিবিডোর খুরে পেন্নাম। আমার এসব কিচ্ছু ভাল লাগছে না। সেই দুপুরে পাউরুটিগুলো জল দিয়ে খেয়েছি কোনওরকমে, এখনও অম্বলে গলা জ্বলছে। কিন্তু এই মেঝের কোণে ভেজা ভেজা ব্যাপার, যেখান হাত ঠেকছে কেমন ভেজা ভেজা লাগছে। সেই সব মনে পড়ে গেল। সব... সেই প্যাণ্ট ভিজে যাওয়া থেকে নিজের হাতে দায়িত্ব তুলে নেওয়া। ভিজে ভাবটাই এমন গা ঘিনঘিনে অসহ্য... ঠিক শালা মনে করিয়ে দেয়!

                                                                                                                                                                                  --- --- --- 

অনেকক্ষণ না খেয়ে আছি বলেই নাকি কে জানে... গা টা গুলোচ্ছে। কখন খেতে দেবে কে জানে। জল খেয়ে পড়ে আছি। এই কাঁচা জল খেলেও গা গোলায়। 
প্রথমবার মুখে নিতে দেখেও বমি পেয়েছিল... ফ্যাদা চাটছে দেখে হর হর করে বমি করে দিতে ইচ্ছে করছিল। বাথরুম পাচ্ছে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছিলাম। শুয়োরের বাচ্চাগুলো হাসলো, খিল্লি ওড়ালো - সালা ধরে রাখতে পারছে না। কিন্তু আমার যে কি হচ্ছিল, তা আমি জানি। রাতে মনে পড়লেই গা গুলিয়ে উঠত। মনে হ'ত পেটের সব খাবার বেরিয়ে আসবে। অ্যাণ্টি-পেরিস্ট্যালসিস আর ব্লো জব যেন একই জিনিস। আর সব কিছুই করুক, তাই বলে মুখে ঢুকিয়ে নেবে অতটা? ফ্যাদা খাবে? এহ! পরে চোখ সয়ে গেছিল... তাও এড়িয়ে যেতাম। কিন্তু প্রথম ক'দিনের কথা মনে পড়লে... 
কার কি ভাল লাগে, জানি না। তবে আমার এমন হয়। প্রথমবার লাশ ফেলতে গিয়েও হয়েছিল। না না... মার্ডার-ফার্ডার নয়! কে মেরেছে, কাকে মেরেছে - তাও জানতাম না। শুধু বলেছিল লাশটা বাসন্তী এক্সপ্রেস থেকে এগিয়ে ওই সুনসান জায়গায় খালে ফেলে দিয়ে আসতে। কাঁচা কাজ। ফুলে ফেঁপে ভেসে উঠবে লাশ, জানা কথা। বলেও ছিলাম। বলল বেশি পোঁদ-পাকামো না করে যা বলা হচ্ছে ততটুকুই করতে। পড়ে বুঝেছিলাম... মানে এইসব লাইনে ঠেকে শিখেছিলাম - ওরা চেয়েছিল বডিটা সকালে কেউ দেখুক। কাকে ঠোকা হ'ল জানা দরকার, কে ঠুকল কারও বাপ বার করতে পারবে না। যার বোঝার বুঝে নেবে, বুঝলেও ছিঁড়বে। সেই প্রথমবার লাশ ফেলতে গিয়েও হয়েছিল। তখন নতুন, একা কেউ ছাড়বে না। মাতিনকে সঙ্গে পাঠিয়েছিল। ও গাড়িটা ঠিক জায়গা মত দাঁড় করিয়ে বলল, "ডিকি খুলে মালটা নামা...  সাইডে নিয়ে গিয়ে ফেলে দে। দু মিনিটের মুধ্যে কাজ হাসিল করতে হবে... কোনও গাড়ির হেডলাইট পড়লে ঢুকে যাব দুজনেই!" ভয় সবার করে, আমারও বুকের ভেতরটা কেমন করছিল। পা দুটো কাঁপছিলপেটের ভেতর মোচর দিয়ে উঠছিল, মনে হচ্ছিল এখনই হাগা দরকার। জিজ্ঞেস করলাম "জলদি নামাচ্ছি মাতিন দা... কিন্তু কোনও আলো পড়লে... দেখে ফেললে..." মাতিন স্টিয়ারিং-এর ওপর মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ ভাবল, তারপর বলল 'তুই বাড়া সত্যিই বাচ্চা আছিস, বেকার এসেছিস এ-লাইনে। অন্য কেউ হ'লে মরতে দিয়ে চলে যেতাম। তোকে ফেলে রেখে যেতেও ইচ্ছে করছে না। কেউ আলো ফেললে দেখা যাবে তখন। চাপ নিসনা। মাল খালাস কর ঝটপট!" বস্তাটা নামিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছি ফেলে দিতে, অমনি মাতিন কেমন খিঁচিয়ে উঠে বলল "বস্তা ফেলছিস কেন বে! শুধু লাশটা ফেল... লাশ"  বস্তা খুলে মরা বার করতে হবে? বাসি মরা, গন্ধে টেক যাচ্ছে না! চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি দেখে আবার ঝার লাগালো "কি বে! গাড়ি থেকে নামলে কিন্তু বিত্তাল ক্যালাবো।" কাঁপা কাঁপা হাতে বস্তার দড়িটা খুললাম কোনওরকমে। মাথার ভেতরে কেমন ঝিমঝিম করছে তখন। তারপর দড়িটা খুলে হাত ধরে টেনে বার করতে গিয়ে... না, থাক! এমনিই খালি পেট। বমি করলে হারামিগুলো পরিষ্কারও করবে না। উলটে খিস্তোবে। কী ভাবে যে বার করে খালে ফেলেছিলাম সেই অন্ধকারের মধ্যে, আমিই জানি। মাতিনের হুকুম ছিল, একেবারে দেশলাইও জ্বালানো চলবে না। লাশটা খালে ফেলার পর পড়ে গেছিলাম ঘাসের ওপর। স্টোন চিপে হাঁটু ছড়ে গেছিল। মাতিন গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে তুলতেই হর হর করে বমি। ঠিক যেমন প্রথমবার ব্লো জব আর ফ্যাদা খাওয়া দেখে বমি করেছিলাম!  যে মাতিন এত রেলা নিচ্ছিল, সেই মাতিনই বোতলের জল মাথায় ঢেলে, বুকের বোতাম খুলে আমাকে গাড়ির পেছনের সিটে শুইয়ে দিয়েছিল। তারপর কোথায় গেছিল, কী করেছিল কিছু মনেই নেই আমার। এক ঘণ্টা এমনই আউট ছিলাম, আর তারপর দু দিন ছিলাম শকের মধ্যে। লাশটার কলার বোনের মধ্যে আঙুল বসে গেছিল বার করতে গিয়ে, কাঠ হয়ে যাওয়া একটা ঠাণ্ডা লাশ, তাও পচতে শুরু করেছে... ওহ! 
সবাই বহুত খিল্লি উড়িয়েছিল। ফাট্টু, গুড বয়, মিষ্টিমনা... অনেক নাম হয়েছিল। মাতিনের কথা শুনে বলেছিল আমাকে দিয়ে কোনও কাজ হবে না। ছেঁটে দেবে। শালা চলে গেলেই ভাল করতাম তখন। এখন ভাবি... ফুটিয়ে দিলেই ভাল ছিল। 

                                                                                                                                                                               --- --- --- 

একটা পচা-গলা লাশ ফেলতে গিয়ে ছড়িয়ে ছিলাম। যারা কোনওদিন দেখেওনি, তারা বুঝবে না প্রথমবার একেবারে খালি হাতে ধরতে হলে কেমন লাগে। একবার একটা পাড়ার ছেলেকে নিয়ে ক্যাওরাতলায় গেছিলাম, পাড়ার এক দাদু মারা গেছিল । সামনে ন'টা ফ্যামিলির লাইন। একখানা বডি দেখে এমন করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল... কাঁদবে না বমি করবে না অজ্ঞান হয়ে যাবে, বোঝা যাচ্ছিল না। টান মেরে বাইরে নিয়ে গিয়ে চায়ের দোকানে বসালাম, চোখে-মুখে জল দিলাম। জল খাওয়ার জন্য জলের জগ ধরতে পারছিল না, এমন হাত কাঁপছিল। কী হয়েছিল কে জানে? সেই খোকা আবার অন্য সময় কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তার বাড়ির সামনে রঙ নিতো! হুঁ হুঁ, চাপ আছে মামা... না দেখলে বুঝবে না! আমিও ছড়িয়ে ছিলাম, কিন্তু ওই লাশ ফেলতে গিয়ে। ওই তলতলে ঢলঢলে ব্যাপার নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি ভাবলেই বমি পায়। ঠিক ওই ফ্যাদা খাওয়া দেখলে যেমন হয়। কিন্তু প্রথমবার অন্য কিছু করতে গিয়ে এমন অবস্থা হয়নি। দিব্যি পাশ করে গেছি ভাল নাম্বার পেয়ে। হ্যাঁ স্কুলেও ভাল নাম্বার পেয়েই পাশ করতাম, স্ট্যাণ্ডও করেছি। প্রথম দশ জনের মধ্যে থাকতাম। সে কথা থাক। মশা কামড়ালে রক্ত খায়, র‍্যাঙ্ক করলেও খায়, ফেল করলেও খায়। প্রথমবার মেশিন ধরাতে পাশ, মাল সাপ্লাইতে পাশ, তোলা আদায়ে পাশ... এমনকি হাতের ভরসায় না থেকে প্রথম যখন প্র্যাকটিকাল করতে গেলাম, সেখানেও পাশ। পিণ্টু নিয়ে গেছিল সঙ্গে করে, কণ্ডোম নিয়ে যাচ্ছি দেখে হেসেছিল। পিন্টু সালা রটিয়ে দিয়েছিল এটা, সবাই নামই রেখে দিয়েছিল ডোম। 'ডোম কাঁহা হায়! কাঁহা হায় ডোম? ডোম... কৌন ডোম? কণ্ডোম! কণ্ডোম!' কিন্তু আমি চাপ নিইনি। কণ্ডোম নিয়েই যেতাম। খালেদ বড় পাইলট ছিল, সেও শালা কণ্ডোম ওঠালো... যখন দেখলো তিওয়ারি ওই ভাবে মরল। কেউ বলুক না বলুক। এইড্‌স ছিল। পাক্কা এইড্‌স কেস। বললে পুরো এরিয়ার বিজনেস চোপাট হ'ত। কার থেকে হয়েছে আলাদা করে বলা যায় না। আর ওটা ওদের লাইন, আমরা কিছু বলতে করতে গেলে আমাদেরই ক্যাল খেতে হ'ত। সবার মাথার ওপর বাপ থাকে। তিওয়ারি মরল বলেই ভয় ঢুকল, মরার ভয় না... ফোকট মরার ভয়। সালা ঠাপাতে গিয়ে মরে গেল। হাসতে হাসতে কপাল ব্যথা। মজাক মজাক মেঁ রজ্জাক কা মৌৎ! 

     ডিম্পি আর বিউটি দু'তিনবার বলেছিল, কানে নিইনি। তিওয়ারিটা দরজা বন্ধ করার পর কুত্তামো করত। এদিকে জাত মারাতো, হপ্তায় চার দিন নিরামিষ খেতো... আর ফুটো পেলে খাঁচার বাঁদরের মত লাফাতো।  ডিম্পিদের জোর করে বলত মুখে নিতে, দেওয়াল ধরে দাঁড়াতে। দড়ি দিয়ে পিছমোড়া করে হাত বেঁধে দিতো... বেশি টাকা দেবে বলে। ঝামেলাটা হ'ল জারিনাকে নিয়ে। ও ঠিক ভিজে চিঁড়ের মত নয়। ডিম্পির ঠোঁটে রক্ত দেখেই টেনে নিয়ে গিয়েছিল। নিশ্চয়ই থাইয়ে, পাঁজরে, মাইতে কালশিটে বা দাঁতের কামড়ও পেয়েছিল ভাল মত। এগুলো অল্পস্বল্প অনেক সময় হলেও সব সময় মুখ বুঁজে সবাই সহ্য করবে এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয়নি। মাতিন আর আমার সামনেই ঠাঁস করে থাপ্পড়টা মেরেছিল জারিনা। বাজারে এতগুলো লোকের সামনে চড়। তিওয়ারীর জ্বলবেই। কিন্তু ওটা আমাদের এরিয়াই নয়। ওদের নিজেদের লোকজন থাকে। মাতিন আর আমি টেনে নিয়ে এসেছিলাম তিওয়ারিকে। অনেকদিন অবধি তিওয়ারি ভাঁজ মারত, কী করে জারিনাকে ওঠাবে। আমরা হেসে বলতাম 'রেন্ডি উঠাই কাঁহা ভাগলবারু তিওয়ারি বাবুয়া?'  ওর ঠোকা-ফোকার তাল ছিল না। ও খালাস করে দিতে চেয়েছিল। ঠাণ্ডা মাথায় খুন করতে পারত তিওয়ারি। সে খুর হোক, দা হোক, কাস্তে হোক, ওয়ান শটার হোক... যাই দিক। একদম সার্জেনের মত ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করে আসতে পারত। পুলিশের লিস্টে একদম ওপড়ে নাম ছিল, নেহাৎ মাথার ওপর শক্ত হাত ছিল তাই ভেতরে ঢোকাতে পারত না। আমরা শিওর ছিলাম, যে কোনওদিন পার্টি জয়েন করবে তিওয়ারি। অনেক ছক ছিল ওর মাথায়। এইরকম সিজন্‌ড মাল মেয়েছেলে দেখলে এমন তাণ্ডব করতে চাইত কেন কে জানে! আর জারিনার ওই চড়টাও যেন ওর গালে নয়, একেবারে ওর বিচিতে লেগেছিল! জারিনাদের ওখানে অনেকবার গেছি বলেই জানি, কতটা মাথার ওপর দিয়ে কোনও কেস গেলে ওরা ভরা বাজারে ক্যাচালে নামে। ভদ্দরলোক নই, কিন্তু বাপ-মা ভদ্দরলোকই আছে এখনও। ভদ্দরলোকের ছেলে হয়েই গেছি... আর বলছি - ওই চড়টা খুব কম ছিল। আমরা না থাকলে তিওয়ারিকে জ্যান্ত জ্বালিয়েও দিতে পারত ওইদিন। মাগী-টাগী নয়, আমাকে যেতে হ'ত চরস আর গাঁজার একটা রেগুলার ডিলের ব্যাপারে। ওই কিছু লোকজনের দরকার পড়ত বড় কাস্টমারদের জন্য, আমাদের থেকে মাঝে মাঝে নিতো। এক আধবার শুয়ে-টুয়ে ছিলাম মস্তি নিতে, কিন্তু পোষাতো না। কেমন মায়া হ'ত মেয়েগুলোকে দেখলে। বোন-ফোন ভেবে উথলে উঠত এমন বাল নাটক করছি না। ফালতু লাগত, 'ছাড়া আর কিছুই করার নেই তাই করছে। তার ওপর আমি গিয়ে কি বেকার টাইম পাস করব? এই দেখলাম সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছি, এই দরজা বন্ধ করে আঁচল খুলে দাঁড়িয়ে গেল... লে চোষ। ধোর! ভদ্দরলোকের ছেলে বলে না, ভদ্দরলোকদেরও অনেক দেখেছি... সাদা গাড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক দেখতে। গাড়ির ভেতর বসেই, অন্য কাউকে দিয়ে ডাকিয়ে... একজনকে তুলে নিয়ে চলে যেতে। এদের নয়, ওই সতীপনা মুখ করা ভদ্দরলোক কাকুদের বউগুলোর কথা ভাবলে আরও বেশি সিমপ্যাথি দেখাতে ইচ্ছে করে।  অথচ, আমাকে সালা এখনও কেউ সিমপ্যাথি দেখাচ্ছে না... খিদে পেতে পেতে ঘুম এসে গেল। ঘুমের মধ্যে হাবিজাবি ভাবছি, বকছি। পকেটমার না কি সালা কে জানে, বসে বসে এক টানা দেখে যাচ্ছে আমাকে। ভিজে ভিজে ঘরে একটা ঘেন্না প্যাচপ্যাচ করে জড়িয়ে রেখে দিয়েছে একেবারে। 

                                                                                                                                            --- --- --- 

তিওয়ারিকে অন্য এরিয়ায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমরা জানতাম ও টিকি পাকাতে পাকাতে ঠিক একটা কিছু গোলমাল করবে। ওকে শেলটার দেওয়ারও লোকের অভাব নেই। কিন্তু রেণ্ডি-পাড়ার জন্য কার আর মাথা ব্যথা। ওখানকার লোকজন নিজেদের প্রোটেকশান ভাল বোঝেহাত কেটে হাতে দিয়ে দেবে বেশি প্যাঁচ নিলে। তিওয়ারিটাও ঠাণ্ডা মাথার মাল ছিল। ওইদিকেই ঘেঁষল না আর। ঈদের ঠিক আগে একদিন রানিং বাইক থেকে জারিনার গালে খুর চালিয়ে দিয়ে চলে গেল! শুয়োরের বাচ্চা জানত, নজর রেখেছিল অনেকদিন ধরে... এরিয়ার বাইরে কিছু কিনতে বেরিয়েছে দেখেই এটা করল। জানে মারল না, লাইফের মত ধান্দাটা নষ্ট করে দেওয়ার জন্য এটা করল। খুব ব্লিডিং হয়েছিল। ডিম্পি আমাকে ফোন করেছিল। আমি আর সুলেমান বাইকে করে যাওয়ার আগেই কাছাকাছি সরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেছিল, এমার্জেন্সিতে। সরকারী হাসপাতালের এমার্জেন্সি, জাঙ্গিয়ার বুক-পকেট। আমরা যাওয়ার পর স্টিচ করল। সঙ্গে সঙ্গে বার করে এনে একটা নার্সিং হোমে তুললাম। জ্বর এসে গেছিল। কাঁপছিল সারা রাত। হ্যাঁ, সারা রাতের কথা জানি... কারণ আমিই বসেছিলাম ওর পাশে। কিন্তু এখন আর কী হবে এসব ভেবে। তিওয়ারি সালা গা ঢাকা দিলো, আর ক'মাস পর যখন খোঁজ পেলামশুনলাম চিত্তরঞ্জনের দিকে কোথাও হাসপাতালে ভর্তি, শেষ অবস্থা। মালটা বুঝতেই পারেনি এতদিন ভেতরে ভেতরে কি বাঁধিয়ে বসে আছে। দেখতে যাইনি। ইচ্ছে করল না। কারণ ওসব ফিল্মি ক্ষমা-টমা চাওয়ার মত কিছু হ'ত না। আর আমার কাছেই বা ক্ষমা চাইবে কেন?

     জারিনাকে কেউ 'শাপে বর হ'' টাইপ জ্ঞান দিলে খিস্তি করতে ইচ্ছে হয়। হ্যাঁ, গালে ৮টা সেলাইয়ের দাগ নিয়ে কাস্টমার ধরা যাবে না। কিন্তু তাই বলে এইরকম হবেই বা কেন? মুখটাতো ওর নিজের, ও যাই করুক... ওর রাইট ছিল ভাল ভাবে থাকার। ওই পাড়াতে বেশিদিন থাকতে পারবে না জানত। মৌসি-ফুফা বলে যাদের ডাকত, তাদের প্রথমে ক'দিন আহা-উহু চলল তারপর 'মর সালি'আমিও জানতাম, বেশিদিন টানতে পারবে না। বলেছিলাম পাত্তা দিলো না। লাথ খাওয়ার পর আবার বোঝালাম, শুনল। 
     আর কি... এত দিন এত রকম কেস ঠাণ্ডা মাথায় পাশ করিয়ে দিলাম, আর ওকে নিয়ে ট্রেনে করে মুঘলসরাই যেতে গিয়ে ফিমেল ট্রাফিকিং কেস খেলাম। বর্ধমান পেরনোর পরই ধরল। কেনই বা বেছে বেছে এসে আমাদের টানল তা প্রথমে বুঝিনি। পরে বুঝতে পারলাম, রেডলাইট এরিয়া হলে কী হবে, ওই যে বললাম সবার মাথায় বাপ থাকে! ওদেরও হাত লম্বা, ঠিক কাঁচি করে দিয়েছে জায়গা মত। জারিনাকে বার বার করে বলেছিলাম, একা আসতে। বেশি সেন্টিগিরি না করতে। সেই মলি বলে বাচ্চা মেয়েটাকে নিয়ে এলো সঙ্গে করে। ষোলো বছরও বয়স হয়নি। তৈরী করছে সবে, নিয়ে এলে ছেড়ে দেবে ওরা? বোন-টোন অনেক কিছু বলেছিলাম। কিন্তু মামারা কেউ আমাদের কথা শুনতে আসেনি। শুধু ধরে ট্রেন থেকে নামাতে এসেছিল। থানায় আনার পর ওদের কোথায় নিয়ে গেল কে জানে, দেখতে পেলাম না। মেয়েটার কিছু হবে না, চড়-থাপ্পর লাগিয়ে আবার নিয়ে যাবে হয়ত। কিন্তু জারিনার জন্য চিন্তা হচ্ছে, কাউকে কোনও ভাবে বলতেই হবে ওকে শেলটার দিতে। এরা সালা আমার কথা কেউ শুনছেই না... একটা ফোন করতে দিলে সব ম্যানেজ হয় যায়! 
আমার কিছু হবে না, ফল্‌স কেস দিয়ে এদের কোনও লাভ নেই। কোর্টে তুললে বলবে টা কি? ফালতু ফালতু কেস সাজিয়ে পাবেই বা কি! আজ না হ'লে কাল, আমি ঠিক বেরিয়ে যাব। বড় বড় কেসে ভেতরে করতে পারেনি, আর এতো কিছুই করিনি সালা। শুধু বাড়ির নাম্বার ফাম্বার নিয়ে বাবাকে ফোন লাগিয়ে এক্সট্রা পাকামোটা না মারলেই হল। 

     আমার কিছু না। আমার আর কী করবে? এদিক সেদিক শেলটার নেবো। বাড়িতে ঢোকা হবে না। বাড়িতে ঝুটঝামেলা করলে পাড়ার লোক আছে, আমার বদনাম থাকলেও বাবাকে এখনও সম্মান দেয় লোকে। ক্লাবের ছেলেরা ঠিক গার্ড দেবে। না দিলে, আমি গিয়ে কাপসাবো, জানে। কিন্তু জারিনার জন্য মনটা খচখচ করছে। বুদ্ধি কম, ওই পাড়ার ধারে কাছে গেলে বা মেয়েটার জন্য আবার সেন্টি হলে মরবে। শ্রেফ মেরে ফেলবে এবার হাতে পেলে। ওকে ওদের কোনও দরকার নেই, কিন্তু এইসব হিরোগিরি মারলে ক্যাল খেতেই হয়। এত ডেয়ারিং কেন মারতে গেল, এত বার করে বারণ করলাম... তাও! 
ওফ... চুলোর মশা! আরে ও দাদা... কিছু খেতেটেতে তো দেবেন, আমি টাকা মিটিয়ে দিয়ে যাবো খাবারের। কাল সকালেই মিটিয়ে দেবো কেউ এলে। আরে কিছু খেতে তো দিন! এভাবে না খাইয়ে রেখে দিলে কিন্তু বেরিয়েই প্রেস কে বলব বলে দিলাম!

     এই ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে ঘরটাতে আর বেশিক্ষণ থাকতে সত্যিই ভাল লাগছে না। কেন যে এর ভেতর টেনে ফেলল কে জানে। ফল্‌স কেস নিজেরাও জানে, তাও ছেনালি করছে! মাতিন, শুভ, সুলেমান... ওরা কি কেউ জানে না এখনও? একজনও তো কেউ এলো না! দু'দিন হয়ে গেল, এমন তো হয় না কখনও। কাল সকালে হয়ত এসে যাবে, একটা ফোন করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে! সালা এই ফুলপ্যাণ্টটা আরও বেশি ক্যাচক্যাচ করছে, জ্বলছে ভেতরে। কুটকুট করছে কম্বলের মত। আর এমন ফুল প্যাণ্ট পরে থাকব না সারাদিন। এখান থেকে বেরিয়ে আগে জারিনাকে পাই, তারপর নতুন ক'টা হাফ প্যাণ্ট কিনব। বারমুডা। হাফ প্যাণ্ট পরেই ঘুমবো আবার রাতে। হাফ প্যাণ্টে যা জমে ছিল, তা ফ্যাদা নয়। তার কথা ভাবলে বমি আসে না, গা গুলোয় না। হাফ প্যাণ্টের শিরায় শিরায় যা জমে ছিল, তা ভেজা স্বপ্ন। স্বপ্নগুলো ভিজে, একটা ভিজে পর্দা ছুঁয়ে থাকত আমাকে। প্রতিদিন, দিনের পর দিন... রাতের পর রাত এই ভিজে যাওয়া আমি সহ্য করতে পারিনি। এইভাবেই অনেক মানুষ স্বপ্ন সহ্য করতে পারে না। ধুয়ে, নিংড়ে, কচলে একেবারে মুছে দিতে চায় সেই সব স্বপ্নের দাগ। 
জারিনার গালের ঐ সেলাইয়ের দাগটাতেও স্বপ্ন লেগে আছে, ওর হাসি এতটুকু খারাপ করতে পারেনি। এখন শুধু আমাদের এই দাগধরা স্বপ্নটাকে কেউ জামিন পাইয়ে দিক... আপাতত জামিনটুকু পাইয়ে  দিক! 


                                                                         (চিত্রঋণ : Andy Warhol)

No comments:

Post a Comment