বাক্‌ ১১৫ ।। শুক্রানু ও পানু ।। সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়




আরো বেশি ঘন ঘন বসবার ইচ্ছা হয়; বসেই দেখেছিএত বেশি সুখ আর কোন কিছুতেই নেই; কবিতায় গানে এত বেশি সুখ নেই; অনেক দৃশ্যই আমি জীবনে দেখেছিতবুও দেবীর দেহ, দেবির বাতাবী গ্রাস সকলের সেরা । এদের মতন এত সৌন্দর্য রোমাঞ্চ আর কোনো কিছুতেই পাইনি, পাব না, তাই বুঝি সে বসাই হল আসল ব্যাপার ।গ্রাসের ভিতরে স্তম্ভ পুরে দিয়ে ঢেউ দেওয়া- এই ব্যাপারের
তুল্য অন্য কোনো কীর্তি মানুষের নেই বলে টের পাই । ফলে বুঝি বসা হল মানুষের জীবনের কর্তব্য, হয়তো একমাত্র কর্তব্য...
বিনয় মজুমদার

ভেনাস উইলিয়ামসকে দেখে দৈত্যগুরু শুক্রাচার্যের কথা মনে পড়ার কষ্টকল্পনা মনুজন্মে সম্ভব না। ভেনাস অবশ্য সুন্দরী, কি মিষ্টি হাসিটি তার, দীর্ঘ পদদ্বয় চুম্বনাশ্লেষজনিত স্পৃহা তৈরিতে সক্ষম, কোর্টে তার ক্ষিপ্র গতি চনমনায়তে, বগল তুললে ঘামের গন্ধটি অনুমান করে নিতে অপার্থিব সুখ হয়। আহা সৌভাগ্যবান তোয়ালে। গেম শেষে চেয়ারে এসে বসেন তিনি, তোয়ালে ধন্য হয়, তাকে আচ্ছন্ন রেখে পরবর্তী গেমে যান তিনি। গ্যাব্রিয়েলা সাবাতিনিকে মনে আছে? কখনও স্টেফি গ্রাফের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দ্যাখানো মারাদোনার দেশের এই কালো চুলের মেয়েটির (সে বছর বিশেক হলো, এখন অনুমান ৪৫, মেনোপজও কি হয়ে গেছে?) ঘামে ভেজা তোয়ালে কোনো সময় নিলাম হয়েছিলো, মনে আছে, সুধী? তা, কথা হচ্ছিল ভেনাসকে নিয়ে। সে ভেনাসসুন্দরীর সঙ্গে দেবযানীর বাপ কচগুরুকে গুলিয়ে ফেলার, না কোনো সম্ভাবনাই নেই।
শুক্র। তরল? সান্দ্র? আড্ডায় বন্ধুবান্ধবান্ধবেরা সলমন খানকে নিয়ে আলোচনা করে, যে, কবে করবে? এরপর তো বাতাস বেরোবে! অর্থাৎ বায়বীয়ও?
তা, আচাজ্জিমশাই তো কচকে হজম করে ফেললেন। এরপর কি হবে? জানতে হলে দেখুন, "ঘন্টাখানেক ভাগ্নেমদন" স্টার নন্দিতয়, রাত সাড়ে আটটায়। প্রযোজক জাপানি তেলে তৈরি মাছভাজার কোম্পানি "কেনফিশ"।
প্রাণগোপাল কারো নাম হতো কখনো। প্রাণকান্তও। এসব নাম অনেকদিনই রাখা হয় না। কিন্তু সেসব নাম থেকে নিষ্ক্রান্ত 'পানু' ডাকনামটি এখনও টিমটিম করে জ্বলছে, কয়দিন পর আর থাকবে না। 'পানু' ডাকনামধারী বঙ্গীয় পুরুষদের এটাই শেষ প্রজন্ম বলা যায়। 'মরার বাড়া গাল নেই', অর্থাৎ মৃত্যু অভিশাপের বেশি অভিশাপ হয়না একথা আজকাল বলা যায়না যেকারণে। 'লোকহিত' বলে রবিদার একটি প্রবন্ধ এককালে হায়ার সেকেন্ডারিতে পাঠ্য ছিলো। তাতে রবীন্দ্রনাথ ( উত্তমর্ণের মানসিকতা বোঝাতে সম্ভবত:) 'শাইলকের বাড়া' শব্দদ্বয় ব্যবহার করেছিলেন, মানে সে শাইলকেরও ওপর দিয়ে যায়। এখানে একটি চন্দ্রবিন্দু যোগ করেই আমরা উচ্চারণ করতাম, তাতে কাল্পনিক শাইলক চরিত্রের কোন হেলদোল হতো কিনা কোন খবর নেই, মহামতি শেক্ষপীরের কঙ্কাল কফিনের মধ্যে শিহরিয়ে উঠতেন কিনা সেটাও জানা যায় নি এবং আশা করা যায় ব্রহ্মলোক থেকে রবিদা আমাদের এই চাপল্য দেখে তাঁর মর্মরশুভ্র দাড়িগোঁফের ফাঁকে প্রশ্রয়ের মৃদুহাস্যই করতেন। 
না বাঁড়া নিয়ে এ ভ্যানতাড়া নয়। কথা হচ্ছিলো সে পিচকারির তরল নিয়ে। খারাপ লাগছে? ইয়ে, আপনার জন্ম ওটার থেকেই, বিশ্বাস করুন। সত্যিই। ওই যে মহামতি শেক্ষপীর, ওই যে ব্রহ্মসম রবিদা, আপনার ঠাকুরঘরে (বা, লকেটে) রাখা গুরুদেব, বা ধরুন রামকৃষ্ণদেব, চৈতন্যদেব, বুদ্ধদেব যীশু (না ভগবান টগবান না, মেরির বরেরই) মহন্মদ মোজেস কৃষ্ণ রাম মোদি মমতা মায়া সব সঅঅঅঅঅঅব মনুষ্য, বুঝলেন কিনা, ওই শুক্র থেকেই।
 
অধিক বোঝাতে 'বাড়া' শব্দটা যেমন আর ব্যবহৃত হয়না, চন্দ্রবিন্দুযোগে অন্য একটি শব্দ প্রবলপ্রতাপে এসে গেছে, সেটি তথাকথিত অশিষ্ট, তাই এলিট ন্যাকাজনেরা তা পরিহার করেন, তেমনই পানু ডাকনামটাও আজকাল আর রাখা হয় না, পর্ণোগ্রাফির শর্ট ফর্ম পর্ণো থেকে পানু উদ্ভূত হয়ে অন্য সব প্রতিশব্দকে সরিয়ে দিয়েছে। বিএফ, গুপি বিস্তর অন্য ডাকনামও ছিলো। পানুই জিতলো।
এমতাবস্থায় পানুর সঙ্গে শুক্রাণুর সরলরৈখিক যোগ 'ডিম থেকে মুরগি'র মতো সহজ না। ডিম থেকে হাঁসও হয়, কচ্ছপও হয়, সাপও হয়। তবে মুরগি তো ডিম থেকেই হয়, ম্যাকডোনাল্ডের বাড়ির ছাদে কিম্বা আরামবাগের হ্যাচারি থেকে বেরোয় না, পানুর সঙ্গে শুক্রাণুর অতোটিই যোগ। শুক্রাচার্য তো কচকে গিলে ফেললেন। তারপর? কি হবে? যখন জানা গ্যালো কচ তার পেটে, তিনি মৃতসঞ্জীবনী মন্ত্র পড়ে কচকে বাঁচালেন, সে গুরুর পেট ফেটে বেরোলো। পেট ফেটে গুরু এদিকে মৃত, তাকে আবার কচ সেই মৃতসঞ্জীবনী মন্ত্র পড়েই বাঁচালো। পৌরাণিক এসব গল্পগুলির বাস্তবের কাছাকাছি ব্যাখা ভাবতে গিয়ে এই কাহিনীতে একটু থমকাতে হয়। কীভাবে? হয়েছিলোটা কি আসলে? কচ বহুবার দৈত্যদের হাতে ক্যাল খেয়েও গুরুর ওষুধেই নাহয় প্রতিবার জীবিত হয়েছিলো। কিন্তু এই পেট ফাটার কেসটা কি? মদ্যপান করে গুরুই ভ্যাবলভোম্বল অবস্থা, সুযোগ্য শিষ্য গুরুলব্ধ জ্ঞান প্রয়োগ করেই তাকে বাঁচিয়েছিলো, কিন্তু কচের এই মৃত্যু তথা ক্যাল খাওয়াটার ব্যাখা কি?
ব্যাখা যাইহোক, কচ বলছে, সে কখনো গুরুর উদরে ছিলো, দেবযানীও তাঁরই দেহে কখনো শুক্ররূপে ছিলো, অর্থাৎ তারা দুইজনে ভাইবোন। এক্স এক্স, এক্স ওয়াই। বিজ্ঞান, হে বিজ্ঞান, তুমি কতো রহস্য ঘুচিয়ে দিয়েছো!
পানু কোথায় গিয়ে সাহিত্য হয় তা আমি জানি না, সাহিত্য কাকে বলে, তা-ই আমি জানি না। তবে রস যে পাওয়া যায় তা তো বটেই। তা সবার জন্য না হতেই পারে। ভিন্নরুচির্হি লোকাঃ। আমার তাড়ি খেয়ে দিব্য মস্তি হয়, তোমার হয়তো অ্যাবসাঁৎ নইলে জমে না
নয়? 
পানু এক আদি শিল্প। কেউ কালিদাসেও পানুরস ভোগ করতে পারে, জয়দেবেও, হলুদ মলাটে তো কথাই নেই। যৌনতার কথা উচ্চারণ করা শিষ্ট এলিট সমাজ যদ্দিন এড়িয়ে যাবে, তদ্দিন পানু চলবেই। এও কথা, যৌন কৌতুহলই প্রধানত: পানুর ক্রেতা। এতটাই এবং এটুকুই।
শুক্রাণু নিয়ে এটুকু বলতে পারি, যতোটা দান করেছি, তা যদি প্রত্যেকটি নিষিক্ত হতো, তাহলে সারা সৌরজগতে কলকাতার মতো ঘন জনবসতি গড়ে দিতে পারতাম।
অলমিতি। ভালো থাকুন। আমায় খানিক গালি দিলে যদি ভালো থাকেন, আমায় গালি দিন। ওয়েলকাম

No comments:

Post a Comment