বাক্‌ ১১৫ ।। আমার কোনো শৈশব ছিল না ।। রঙ্গন রায়




মায়ের প্রেশারের ওষুধ কিনে ফেরার সময়
মনে হলো এই মাত্র জন্ম নিলাম আমি
রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার বয়স নয় এটা
জ্ঞান না হওয়া ইস্তক আমার কিছুই করা ঠিক নয়,
এখন আমার বিছানা দরকার, একটা আস্ত-
শুনতে পাচ্ছি মা বলছে, ‘আগে তুই লাল শাক খেতি,
ভাত লাল হলে তুই খেতে ভালো বাসতি,’
আগে মানে ছোটবেলায়? কিন্তু আমার ধারণা
এই উন্মাদ পৃথিবীতে আমার কোনো শৈশব
ছিল না, ছিল না বাবার ইনহেলার
এইসব ওষুধ কিনতে আমাদের যেতে হয়
এইসব ওষুধ কিনতে আমাদের যেতে হয়
হর্লিক্স ফেল মেরে গেলো, শৈশব আমার কোনো কালে ছিলনা,
মনে নেই কোনো সেরেলাক খাওয়ার স্মৃতি,
যখন চিনির অভাবে ঘরে গুড়ের চা
যখন তরকারির অভাবে রুটির বন্ধু গুড়
গুড়ের মত মিষ্টি হলেও চলতো
কিন্তু শৈশব সে সমস্ত কিছুর ধার ধারলো না ;
অনেক বই কেনার কথা ছিল, যেগুলো মনে মনে স্থির,
সত্যিই কি কথা ছিল? সমস্ত কথা আজ হারিয়ে ফেলেছি
এরপর আর ভালবাসা থাকেনা, থাকেনা পাথরের মত বদ্ধমূল
ধারণাকে ফাটিয়ে ফেলার বাসনা, আমি জানি যদি শৈশব
থাকতো তাহলে আমাদের ঈশ্বর থাকতো-
এইভাবে রাস্তায় ফেরার সময় এতসব মনে আসেনা,
প্রেশারের ওষুধের স্ট্রিপ ছিঁড়ে ফেলি, অনেক ভার বেড়ে গেছে
হে ধরিত্রী, আমার শৈশব খেয়ে নিয়েছো তুমি,
হাসা হয়নি - কাঁদা হয়নি - শুধু বেঁচে থেকেছি
এমন ধুসরভাবে কোনো মানুষ বাঁচতে পারে?
অনেক গাড়ি পার হয়ে যাচ্ছে রাস্তা-
ঝমঝম করে মাথায় নাচছে অলৌকিক সত্য
এক্ষুনি চোখ বুজিয়ে ফেলবো, নেমে পড়বো রাস্তায়
তোমার প্রেশার বেড়ে গেছে পৃথিবী,
মায়ের চেয়েও আজ তোমার ওষুধের ভীষণ দরকার
এরপর ফুটপাত ছেড়ে আমি অদ্ভুত কিছু ঈশ্বরের ঘরে যাবো-
আমার বাক্সবন্দি শৈশব ছুঁড়ে দেবো মাটিতে...
বৃষ্টির মতো কিছু স্মৃতি উড়ে উড়ে পড়বে, ঘুমভাঙা রাতে
সকলের কাঁধে ডানা গজাবে, মেঘের মত ডানা-
প্রথম আলোর মতো আমি শৈশব দিয়ে যাবো
কাগজের নৌকায় চড়ে জুলাইমাসে - যা ভেসে চলেছে
স্বর্গের দিকে। উঠোনে এইমাত্র জল দাঁড়িয়েছে,
আমার শৈশব ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে,
চৌকাঠে ভীষণ ভালবাসার গন্ধ লেগে,
মায়ের শাড়ি এখনো পুরনো হতে হতে হয়নি-
বাবার চুল পাৎলা হয়ে গেছে যদিও,
সেই ভীষণ প্রিয় আঙুলগুলো এখনো ধরে ফেলি
শৈশব খুঁজতে খুঁজতে। এই আঙুলের ফাঁকে আঙুল ভরে একদিন
পৃথিবীকে ইনহেলার উপহার দিয়ে যাবো।


                                                          (চিত্রঋণ : francis bacon)

8 comments:

  1. ভালোবাসা রঙ্গন, ভালোবাসা নিস! ❤🌷

    ReplyDelete
  2. ধূসর হয়েই বোধহয় ট্রামলাইনগুলি বেঁচে আছে তিলোত্তমার বুকে!

    ReplyDelete
  3. পড়তে পড়তে এক বিধুর ভালোলাগায় লেখাটা শেষ করলাম। লিখে যা!

    ReplyDelete